ক গ্রামে এক বিধবা মহিলা তার পুত্রকে নিয়ে বাস করতো । কয়েক বছর পরে পুত্রটি একটু বড় হলে তাকে স্কুলে ভর্তি করে দেয় । সে একা একাই বনের মধ্যে দিয়ে স্কুলে যেত । বনের পথ মাঝে মধ্যেই তার ভয় করত । একদিন সে তার মাকে বলল,“এই বনের মধ্যে দিয়ে যেতে আমার বড় ভয় করে” । তখন তার মা বলল, “ তোর ভয় কি ? বনের মধ্যে তোর মধুসূদন দাদা আছে, যখনই ভয় পাবে তাকে ডাকবি সে তোকে বনের রাস্তা পার করে দেবে” । শিশুটি সরল বিশ্বাসে তাই স্বীকার করে নিল। পরেরদিন স্কুল যাবার সময় যখন তার ভয় পেলো তখন সে উচ্চঃস্বরে মধুসূদন দাদা, মধুসূদন দাদা বলে চিৎকার করতে লাগলো। বালকের অসীম ভক্তি ও সরল বিশ্বাসের জন্য বৈকুন্ঠে ঠাকুর আর স্থির থাকতে পারলেন না । তিনি মধুসুদন দাদার রুপ ধরে তার কাছে আসলেন । তাকে দেখে বালকটি অত্যন্ত আনন্দিত হলো । মধুসুদন দাদা তাকে বনের রাস্তা পার করিয়ে দিলেন । এইভাবে মধুসূদন দাদা বালকটিকে রোজ রাস্তায় পার করিয়ে দিত এবং মাঝে মধ্যে তার সঙ্গে খেলা করতো । ছেলেটি তার মাকে মধুসূদন দাদার কথা বলেছিল । তখন তার মা ভাবলো হয়তো কোন বনবাসীর নাম মধুসুদন সে তার ছেলেকে রোজ রাস্তা পার করে দেয় । এই জন্য তিনি বিশেষ আমল দিলেন না ।
এরপরে একদিন গুরুমশায়ের মা মারা গেলো। স্কুলের সমস্ত ছাত্ররা কিছু কিছু জিনিস দেবে । গুরুমশায় এই বালকটিকে জিজ্ঞেস করলেন, “ তুই কি নিয়ে আসবি”
বালকটি বললো,“আমি জানিনা কাল মাকে জিজ্ঞেস করে বলবো” পরেরদিন সে তার মাকে জিজ্ঞেস করলে, তার মা বললো তুই তোর মধুসূদন দাদাকে জিজ্ঞেস করবি। ছেলেটি আনন্দ সহকারে মধুসূদন দাদাকে জিজ্ঞেস করল । মধুসূদন দাদা বললেন, তুমি গুরুমশায়কে বলবে শ্রাদ্ধের জন্য যত দই লাগবে তুমি তা দেবে । ছেলেটি ততোধিক আনন্দিত হয়ে গুরুমশায়কে তাই বলল ।
শ্রাদ্ধেরদিন সকাল থেকে সবাই ব্যস্ত, অনেক লোকজন এসেছে । প্রায় দুপুর হয়ে গেছে, এমন সময় এই ছেলেটি ছোটো এক ভাঁড় দই এনে হাজির । গুরুমশায় এই ছোটো এক ভাঁড়দই দেখে অত্যন্ত রাগে গেলেন। তিনি বালকটিকে অনেক বকলেন। সে অত্যন্ত মনের দুঃখে এক জায়গায় বসে কাঁদছিল, এমন বাড়ির ভেতর থেকে একজন এসে বলল, “ গুরুমশায় অবাক কাণ্ড, এই ভাঁড় থেকে যখন দই শেষ হয়ে সঙ্গে সঙ্গে ভাঁড় আবার ভরে যাচ্ছে আপনা থেকে “। গুরুমশায় একটু অবাক হলেন, বাড়ির ভিতরে গিয়ে দেখলেন সত্যই তাই হচ্ছে । তিনি বালকটিকে ডেকে
জিজ্ঞাসা করলেন “এই ভাঁড়টি তোকে কে দিয়েছে” ।
সে বলল, “ মধুসুদন দাদা, এইটা দিয়ে বলেছে যত লোক আসবে সবার জন্য কুলিয়ে যাবে । ”
গুরুমশায় ,” তোর মধুসূদন দাদা কোথায় থাকে”
বালক, “ বনের মধ্যে”
গুরুমশায় ,” আমাকে দেখাতে পারবি”
বালক, “নিশ্চয়, চলুন আমার সঙ্গে”
অতঃপর গুরুমশায় কয়েক জন লোক সাথে করে বনের মধ্যে গেলেন । সেখানে বালকটি উচ্চঃস্বরে মধুসূদন দাদা, মধুসূদন দাদা বলে চিৎকার করতে লাগলো। কিন্তু কেউ এল না । খানিক পরে এক আওয়াজ এল,” পুত্র তোমার সরল বিশ্বাসে জোরে আমার দেখা পেয়েছ, কিন্তু তোমার সঙ্গে যার আছে তারা বিশ্বাসী নয়, তাই তাদের সামনে আসতে পারব না”।
এরপর গুরুমশায় বালকটিকে বুকে জরিয়ে ধরে অনেক আশীর্বাদ করলেন ।
আজকের এই উপাখ্যান থেকে কি বুঝলেন?
যদি সরল বিশ্বাস থাকে বালকের মতন তাহলেই ভগবান দর্শন করা যাবে। অন্যথায় ভগবান দর্শন সম্ভব নয়। এক কথায়, বিশ্বাসে মিলায় কৃষ্ণ তর্কে বহুদূর।
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।
No comments: