আমিই সেই রামঠাকুর ●
মৃণাল মজুমদার
তিরিশ দশকের প্রথমার্ধে শ্রীশ্রীঠাকুর তখন পূর্ববঙ্গের ভৈরব স্টেষনের রেল আবাসনে শ্রীললিত রায় মহাশয়ের আবাসে রয়েছেন। প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যায় শ্রীশ্রীঠাকুর দর্শন এবং তাঁর অমৃতবাণী শোনার জন্য প্রচুর ধর্মপিপাসু ভক্ত সেখানে উপস্থিত হতেন। সে সময় শ্রীশ্রীঠাকুরের নিকট চেয়ে কেউ কেউ শ্রীনামও পেয়ে থাকবেন। শ্রীশ্রীঠাকুরের আগমনে ভৈরব রেল আবাসন চত্বরে প্রভূত সাড়া পড়ে গিয়েছিল। এক ধর্মীয় পরিবেশের আনন্দে মেতে উঠেছিলেন সেখানকার আশ্রিত অনাশ্রিত ধর্মপরায়ণ ভক্তগণ।
ঠিক এই রকম একটা পরিবেশে তথাকথিত স্থানীয় পণ্ডিত শ্রেণীর এক দাম্ভিক ব্যক্তি, শ্রীললিত রায় মহাশয়ের গৃহের সম্মুখে হাজির হয়ে একদিন উচ্চকন্ঠে শ্রীশ্রীঠাকুরের খোঁজ করলেন। সে সময়কার উক্ত কাহিনীর চমৎকার এক বিবরণ তাঁর অনুপম গ্রন্থে প্রকাশ করে পাঠকদের সামনে রেখেছেন প্রত্যক্ষদর্শী গ্রন্থকার শ্রীসদানন্দ চক্রবর্তী। • • • •
• • • • "কৈ গো তোমাদের রামঠাকুর, তিনি নাকি ভগবান, তানরে একবার দেইখা যাই।"
অহঙ্কারী পণ্ডিতের শ্লেষপূর্ণ বাক্য শুনিয়া সেখানে উপস্থিত সকলেই স্তম্ভিত। গৃহ মধ্যে ভক্ত পরিবৃত হইয়া ঠাকুর মহাশয় একখানা তক্তপোষের উপর তাঁহার স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে বসিয়া আছেন। উদ্ধত পণ্ডিতের কথা শ্রবণ করিয়া শ্রীশ্রীঠাকুর শান্তভাবে বাহিরে আসিয়া সেই পণ্ডিতের সম্মুখে দণ্ডায়মান পূর্বক তাহার দিকে দৃষ্টিনিক্ষেপ করিয়া উদাত্ত কন্ঠে বলিতে লাগিলেন, -
"পূর্ণব্রহ্ম সনাতন, সৃষ্টি স্থিতি প্রলয় কারণ, সত্যনারায়ণ, আমিই সেই রামঠাকুর।"
পাণ্ডিত্যের অহঙ্কারে অহঙ্কারী পণ্ডিত প্রবর কথাগুলি শুনিতে শুনিতে শ্রীশ্রীঠাকুরের মধ্যে কী দেখিতে পাইলেন তাহা তিনিই জানেন। উপস্থিত ব্যাক্তিবর্গ কিছুই অনুমান করিতে পারিলেন না। তাঁহারা শুঝু লক্ষ্য করিলেন সেই আত্মাভিমানী গর্বিত পণ্ডিত মুহুর্তের মধ্যে থর থর করিয়া কাঁপিতে কাঁপিতে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় ভূপতিত হইলেন। তখন উপস্থিত সকলের মধ্যে চঞ্চলতা শুরু হইয়া গেল। কেহ কেহ তাঁহার শুশ্রূষায় ব্যস্ত হইয়া উঠিলেন। চোখে মুখে শিরে জলক্ষেপনপূর্বক তাঁহাকে সকলে ধরাধরি করিয়া যে ঘরে ঠাকুর মহাশয় আছেন সেখানে ঘরের মেঝেতে শোয়াইয়া দিলেন। শ্রীশ্রীঠাকুর পুনরায় তাঁহার পূর্ব নির্দ্দিষ্ট আসনে বসিয়া নির্লিপ্তের ন্যায় সব কিছু অবলোকন করিয়া যাইতেছেন। কিছক্ষণ পর পণ্ডিতের সংজ্ঞা ফিরিয়া আসিল। জ্ঞান ফিরিবার পরে দাম্ভিকপণ্ডিত শ্রীশ্রীঠাকুরের সম্মুখে হাঁটু গাড়িয়া বসিলেন। তারপর হাতজোড় করিয়া কম্পিত কন্ঠে ঠাকুরের শ্রীমুখপানে চাহিয়া সাশ্রুনয়নে গীতার একাদশ অধ্যায় আবৃত্তি করিতে লাগিলেন। সদানন্দদাদা বলিলেন যে গীতার একাদশ অধ্যায় বিশ্বরূপ দর্শন সম্পূর্ণ আবৃত্তি করিতে মুহুর্মুহু কাঁপিয়া উঠিতেছিলেন। তখনও পর্যন্ত সম্পূর্ণ সুস্থ হইতে পারেন নাই। যতক্ষণ তিনি গীতার শ্লোকগুলি পাঠ করিতেছিলেন, ঠাকুর মহাশয় তাঁহার আসনে স্থির ভাবে বসিয়াছিলেন। আবৃত্তি শেষে ব্রাহ্মণের অবস্থা দেখিয়া ঠাকুর বলিলেন, "ওনারে একটু গরম দুধ খাওয়াইয়া বাড়ী পৌঁছাইয়া দেন। একটুকু বিশ্রাম করলেই ঠিক হইয়া যাইব।"
জয় রাম
'ছন্নাবতার শ্রীশ্রীরামঠাকুর'
শ্রীসদানন্দ চক্রবর্তী ।
( পৃঃ ১৯১,১৯২)
"কৈ গো তোমাদের রামঠাকুর, তিনি নাকি ভগবান, তানরে একবার দেইখা যাই।"
Reviewed by srisriramthakurfbpage
on
September 05, 2023
Rating:
No comments: