কেহ ঠাকুরের শ্রীচরণ দর্শনে এলেও তিনি বলতেন, " ক্যান কষ্ট কইরা দেখতে আইলেন,ঘরে বইসা চিন্তা করলেই তো পাইতেন। এ দেহ দিয়া কি করবেন। এ দেহ আমি না। এ দেহ একদিন চইলা যাইব।" তিনি আরও বলতেন, " কোথাও যাইতে হয় না। তীর্থেও যাইতে হয় না। তীর্থে দেবতারা ঘুমাইয়া আছে। সব তীর্থ আজ শ্রী গুরু চরণ।"SriSri Ramthakur
[আসলে আপন জনের এতটুকু কষ্টও যেন সহ্য হয় না প্রাণের ঠাকুরের। ভক্ত বৎসল ঠাকুরের ভাব এমনই হয়।]
এখানে ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণ দেবের একটি ভাব প্রণিধান যোগ্য--
"আপনাতে আপনি থাকো, যেও না মন কারো ঘরে।
যা চাইবি তা বসেই পাবি,খোঁজ নিজ অন্তঃপুরে। "
[প্রকৃত পক্ষে,মানুষ সারা জীবন এদিকে সেদিকে ছুটাছুটি করে,হন্যে হয়ে ঘুরে ঘুরে, শ্রান্ত ক্লান্ত হয়ে অবশেষে ঘরে আসেন ফিরে। কাঙ্গালের ঠাকুর এভাবে ঘুরা ফিরা না করে একান্ত মনে আপন গৃহাশ্রমে, নিজের দেহ মন্দিরে প্রাণের ঠাকুরের নামামৃত প্রসাদ আস্বাদনের আহবান জানিয়েছেন। এভাবে শ্রীগুরুর শ্রীচরণ সেবার মাধ্যমেই সর্ব্ব তীর্থ দরশন, পরশন,অবগাহন সহ সকল ভাবাপ্লুত হওয়া সম্ভব। একথাও সত্য, কোন কোন দেবালয়, আশ্রম বা তীর্থে গেলে সেখানকার অব্যবস্থা,অনিয়ম আর বাড়াবাড়িতে মনে ভাবের বদলে অভাবও জন্মায়। তাই তিনি বলেন, " ঘুইরা ফিরা বার, ঘরে বইসা তের।" --তাহলে,ঘুরাফিরা কম করে, মনে,বনে,কোনে - তাঁর নামপ্রসাদ আস্বাদনের চেষ্টা করাই কি উত্তম নয়?
শুধু তাই নয়, কেহ বার বার ঠাকুর প্রণাম করলেও তিনি বলতেন, গৃহ দেবতাকে বার বার প্রণাম করতে নাই। শুধু অধীন হইয়া থাকলেই হয়।প্রণামেও নাম আছে। প্রকৃষ্ট রূপে নামই প্রণাম।নাম করলে প্রণাম হয়।" আবার কেহ অকারণে তাঁর পিছু পিছু ঘুরলেও তিনি বলতেন, " কেবল লগে লগে ঘুরব আর ডিব ডিব প্রণাম করব এতে কিছু হইব না। যা করতে কইছি তা করতে হইব।"-- এ হলো, আসল কথা। তাঁর নামসুধা আস্বাদন না করে, তাঁর অমৃত নাম প্রসাদের সঙ্গ না করে, অন্যসব করে কি তাঁর প্রিয়জন হওয়া যাবে?
(শ্রী শ্রী ঠাকুরের নাম প্রসাদ বই হইতে সংগৃহীত। জয় রাম জয় গোবিন্দ।)
No comments:
Post a Comment