" দম্ভের দান, দন্ডের সমান।"

 বুঝতে অসুবিধে হয়নি সুধীর চন্দ্র সরখেল মহাশয়ের, চলতি পথে কুড়োনো আমে অহঙ্কার বা কুন্ঠা কোনটাই ছিলো না। কিন্তু কটকের বারো ঝুড়ি যে আম এনেছিলেন , সেগুলো আম নয়, 'অহঙ্কারের ঝুড়ি'।


পড়াশুনোর পাঠ শেষ হয়েছে অনেকদিন, কিন্তু বেকারত্ব ঘোচেনি। দুঃসহ সেই নৈষ্কর্ম জ্বালা।ঠাকুর এসেছেন পাশের গ্রামে , খবর কানে যেতেই মায়ের মনে ঊষার আলো দেখা দিলো। মনে মনে ভাবলেন , ঠাকুরের পাদস্পর্শে ছেলের দুঃখ- নিশার অবসান হবে।

ছেলে তখন ও পায়চারিই করছে দেখে মা বিরক্ত।

সুপারী বেচার টাকা মা একটা হাঁড়িতে রেখে দিতেন। এর আগে যতবার ঠাকুরমহাশয়ের কাছে গিয়েছেন , প্রতিবারই ওই  হাঁড়ি থেকে এক মুঠো পয়সা নিয়ে যেতেন। এবারে হাঁড়িটি শুন্য। শুধু হাতে ঠাকুর সন্দর্শনে যান কি করে। নিজেকে অসহায় লাগছিলো। এদিকে মা তাড়া  দিচ্ছেন।

নিরুপায় হয়ে পথে বের হলেন সুধীর চন্দ্র।

 ভাবলেন, ঠাকুর মহাশয়ের তার এই অসহায় অবস্থার সব কিছুই জানেন।

নিরুপায় হইলেই উপায় হয়।

ঠাকুর মহাশয়ের কাছে যাচ্ছেন সুধীর চন্দ্র। গ্রাম্য পথ। হঠাৎ একটা কিছু পড়ার শব্দ কানে এলো। পিছিয়ে এসে দেখলেন একটা আম , সদ্য পড়েছে গাছ থেকে। মহা- সম্বল এই আম। 

আমটি যত্নে ধুয়ে ঠাকুরের পাশে রেখে প্রাণভরে প্রণাম করলেন ঠাকুরের শ্রীচরণে।

ঠাকুর মহাশয় গৃহকর্ত্রীকে আমটি কেটে সকলকে দিতে বললেন।  কাটা আম একটা বড়ো থালায় করে এনে ঠাকুরের সামনে রাখলেন। ঠাকুর মহাশয় একটুকরো তুলে নিলেন। বাকিঅংশগুলো সকলের মধ্যেই বন্টিত হলো।

'তেতো আম', সবাই ফেলে দিলো। সুধীর বাবু ঠাকুরকে তেতো আম' ফেলে দিতে বললেন। ঠাকুর মহাশয় আমের চিলতেটুকু চাটছেন আর বলছেন," বড় ভাল আম, বড় মিষ্ট আম সুধীর আনছে"।

সামর্থহীনের দেয়া বলেই হয়তো আমের এত দাম। চোখের জল ফেলতে ফেলতে বাড়ী ফিরলেন সুধীরচন্দ্র।


কালচক্র গতিমুখর। চাকা যখন মেদিনী স্পর্শ করে কেউ হয় পৃষ্ট আবার সেই চাকাই তখন উপরে ওঠে তখন কেউ হয় হৃষ্ট।

 অবশেষে সুধীর চন্দ্র একজন  লব্ধপ্রতিষ্ঠ ঠিকাদার কটক শহরে। আজ তিনি প্রভাবশালী পুরুষ।

একদিন ঠাকুর এলেন এই বাড়ীতে। নিজের শয্যার সব পাল্টে দিয়ে ঠাকুরকে বসালেন। জৈষ্ঠমাস, দীর্ঘদিনের ক্ষতস্থান আজ নিশ্চিত নিশ্চিহ্ন হবে। ঠাকুরের অনুমতি নিয়ে আধঘন্টার জন্য বের হলেন। বাজারের  শ্রেষ্ঠ আমি বারো ঝুড়ি কিনে আনলেন। 

বিনীতভাবে ঠাকুরকে জানালেন সর্বশ্রেষ্ঠ আম এনেছেন। কেটে দিলে ঠাকুর গ্রহণ করলে সুধীর বাবু প্রসাদ পেয়ে কর্মস্থলে যাবেন। 

শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন," এখন থাক"। 

যতবার ই দিতে চাইলেন, ঠাকুরমশাই এক ই উত্তর দিলেন "এখন থাক "। 

জৈষ্ঠ্য মাস , কটকের দুঃসহ গরম। বাজার উজার করে শ্রেষ্ঠ আম এনেছেন কিন্তু ঠাকুর সরিয়ে দিচ্ছেন বারবার ।

অবশেষে আম পচতে শুরু করায় সব আম রাস্তায় ফেলে দিতে হয়েছিলো। ঠাকুর মশাই গ্রহণ না করায় বাড়ীর কেউই গ্রহণ করতে পারেন নি।

ঠাকুরের ঘরেই মেঝেতে শুয়ে বিনিদ্র রাত, শুধুই ভাবছেন," ত্রুটি কোথায়"?

সমস্ত  অপরাধ ই তো ঠাকুর ক্ষমা করেন। এবার এমন কি পাহাড়প্রমাণ অপরাধ হলো যে বারো ঝুড়ি আমি থেকে একচিলতে আম ও গ্রহণ করলেন না ঠাকুর।

পরেরদিন ঠাকুর আশীর্বাদ - ভরা  হাত দু'খানি বুলাতে বুলাতে বললেন, " সুধীর এইবার আসি গিয়া"।

এরপর বহুবার ঠাকুর এসেছেন , কারণ খুঁজেছেন প্রচুর কিন্তু কোন ও কারন ই বুঝে উঠতে পারেন নি।

অবশেষে একদিন দুই ভদ্রলোককে ঠাকুর ভোগদানের কথা বোঝাচ্ছিলেন। সৌভাগ্যক্রমে সুধীর চন্দ্র সেখানে উপস্থিত ছিলেন আর সব কথা শুনলেন।

তিনি বুঝতে পারলেন,( ঠাকুর এভাবেই তো বুঝিয়ে দেন) , সেদিনের কুড়োনো আমে কোনো অহঙ্কার বা কুন্ঠা ছিল না। কিন্তু এই বারো ঝুড়ি আমে ছিলো অহঙ্কার।

বুঝতে আর বাকি রইলো না, " দম্ভের দান, দন্ডের সমান।"

গুরু কৃপাহী কেবলম্।

" দম্ভের দান, দন্ডের সমান।" " দম্ভের দান, দন্ডের সমান।" Reviewed by srisriramthakurfbpage on December 10, 2023 Rating: 5

No comments:

শ্রী শ্রী রামঠাকুরেরস্বহস্ত লিখিত পত্রাংশ -দ্বিতীয় খন্ড-223

Powered by Blogger.