সকাল হতে আশ্রমে অগণিত ভক্তের আনন্দ কোলাহল ও কীর্তন আরম্ভ হল। শ্রীশ্রীঠাকুর চট্টগ্রাম শহর হতে সুসজ্জিত মোটরে ভক্ত পরিবেষ্টিত হয়ে আশ্রমে প্রবেশ করলেন। সে সময়ে কী উৎসাহ উদ্দীপনাই না দেখা গেল ভক্তদের ভিতর। কীর্তনের বোল দিগ-দিগন্তে ছড়িয়ে পড়ল, পাহাড় থেকে পাহাড়ে প্রতিধ্বনিত হতে লাগল।
তিনদিন ব্যাপী উৎসব অনুষ্ঠিত হল।অগণিত নর-নারী উৎসবক্ষেত্রে সমবেত হয়ে ঠাকুরকে নিয়ে কতই না আনন্দ করলেন। সকলেই ভাবলেন,এইবার চমৎকার ব্যবস্থা হল।ঠাকুর এখন আশ্রমবাসী হলেন, ভক্তেরা সুবিধামত এসে তাঁর চরণ দর্শন করবেন।
কিন্তু হায়! ত্রি-রাত্রি আশ্রমে অবস্থানের পরই ঠাকুর বলে উঠলেন, 'আচ্ছা, এখন তবে আসি'।
কার সাধ্য তাঁকে বাঁধা দিবে? ঠাকুর ধীরে ধীরে পাহাড়ে থেকে নেমে শহরের পথ ধরলেন। ঠাকুরের সুসজ্জিত কক্ষ ঠিক নতুন অবস্থায়ই পড়ে রইল।
সেই বৎসর আশ্রমে দুর্গোৎসবের আয়োজন হল।রব উঠলো, পূজায় শ্রীশ্রীঠাকুর আশ্রমে উপস্থিত থাকবেন। কাজেই বহু আশায় আবার ভক্তবৃন্দ সমবেত হলেন পাহাড়তলী আশ্রমে। পূজার প্রতিমা সজ্জিত হল,আয়োজন উদ্যোগও যথারীতি আরম্ভ হল।উৎকণ্ঠিত হয়ে সবাই ঠাকুরের প্রতীক্ষা করতে লাগলেন। কিন্তু ষষ্ঠী গেল,সপ্তমী এলো,কিন্তু ঠাকুর এলেন না—এলো তাঁর দীর্ঘ একখানি পত্র।ঠাকুর লিখেছিলেন, —স্থূল দেহে ঐ আশ্রমে প্রবেশের অধিকার আমার থাকলো না।গুরুদেব আশ্রমের ভার গ্রহণ করলেন —এই পত্রে আশ্রমের পুকুর ও বৃক্ষাদি সম্পর্কে বিশেষ বর্ণনা আছে।
কিন্তু ঠাকুর স্থূলদেহে আর আশ্রমে প্রবেশ না করলেও ভক্তগনের কদাপি সেখানে আনন্দের অভাব ঘটে নাই এবং অদ্যাপিও ঘটছে না।
অত:পর লৌকিকভাবে একটি সাধারণ প্রশ্ন অনেকেই জিজ্ঞাসা করেছেন।
'ত্রি-কালদর্শী ঠাকুর কি জানতেন না, যে দেশের পরিবর্তন আসন্ন এবং তাঁর ভক্তগণ আশ্রমের আনন্দ হ'তে বঞ্চিত হবেন? এসব জেনেও তিনি পাহাড়তলীতে এবং ডিঙ্গামাণিকে আশ্রম ও মন্দির প্রতিষ্ঠায় অনুমতি দিলেন কেন?
দেশবিভাগের ফলে তাঁর অসংখ্য ভক্ত হিন্দুস্থানে চলে আসলেন,আর তিনি নোয়াখালি জেলার চৌমুহনীতে উপেনবাবুর বাড়িতে অবস্থান করতে লাগলেন এবং সেই স্থানেই দেহত্যাগ করলেন। তিনিও কেন হিন্দুস্থানে চলে এলেন না?
মনে হয়, প্রশ্নটি আদৌ জটিল নয়।মায়ার জগতে মায়ামুগ্ধ জীব আমরা। আমাদের পক্ষে উপরোক্ত রূপ চিন্তা করা আশ্চর্যের কিছু নয়।কিন্তু প্রকৃত মহাপুরুষগণের পক্ষে বিষয়টি সম্পূর্ণ অন্যরূপ।মহাপুরুষগণ দেশ কালের অতীত।ব্রহ্মাবগাহীব শ্রীশ্রীঠাকুরের কাছে কি এ-দেশ সে-দেশের কোন বিচারবিতর্ক থাকতে পারে? জগৎ পরিবর্তনশীল,ভ্রান্তি, মায়া।মায়াতীত ঠাকুরকে উক্ত রূপ বিতর্কের বিষয়ীভূত করা আমাদের ভ্রম ভিন্ন আর কিছুই নয়।
শ্রীশ্রীঠাকুর রামচন্দ্রদেব
কিন্তু হায়! ত্রি-রাত্রি আশ্রমে অবস্থানের পরই ঠাকুর বলে উঠলেন, 'আচ্ছা, এখন তবে আসি'।
Reviewed by srisriramthakurfbpage
on
April 03, 2024
Rating:
No comments: