জয়রাম। জয়গোবিন্দ। দয়াল গুরু শ্রীশ্রী রামঠাকুর এর কথা.
এক প্রদীপ থেকে যেমন বহু প্রদীপ জ্বালানো যায় ঠিক সেইরূপ এক দেহ হইতে বহু দেহের আবির্ভাব হইতে পারে। মন দ্বারা অর্থাৎ ইচ্ছাশক্তির দ্বারা দেহের অংশ বাহির করিতে হয়। এইসব অংশ দেহ হইতে বাহির হইয়া আবার দেহে আসিয়া লীন হয়। অংশগুলি দেখিতে ঠিক মূলের অনুরূপ।
মৃত্যুর পর যে দেহ নির্গত হয় তাহা ঐরূপ নহে, তাহাকে সূক্ষ্ম দেহ বলা হয়। ঐ সূক্ষ্ম দেহের সহিত কারণ দেহ বিদ্যমান থাকে বলিয়া পুনরায় উহাকে স্থুলদেহ ধারণ করিতে হয়। 'কারণ' মানে হেতু, প্রয়োজন অর্থাৎ অভাববোধ। কারণ দেহ না থাকিলে সূক্ষ্ম দেহ আসিতে পারে না।
শ্রীশ্রী রামঠাকুর
আমি প্রথমদিন যখন তাঁহার সহিত দেখা করিতে যাই, সেদিন শাস্ত্রালোচনা করিয়া তাঁহার শাস্ত্রজ্ঞান পরীক্ষা করিতে চেষ্টা করিয়া মনে হইল যেন তাঁহার শাস্ত্রজ্ঞান কিছুই নাই এবং ঐ অশ্রদ্ধার ভাব লইয়াই বিদায় গ্রহণ করিয়াছিলাম। কিন্তু দ্বিতীয় দিন যাইয়া যখন আমার মনের কতগুলি সংশয় নিরাকরণের জন্য প্রশ্ন করিতে লাগিলাম, তখন তিনি জলের মত করিয়া সমস্ত এমন সরলভাবে বুঝাইলেন যে, আমি একেবারেই স্তব্ধ হইয়া গেলাম এবং আমার তথাকথিত শাস্ত্রজ্ঞানের অহংকার একেবারে ধূলিসাৎ হইয়া গেল। কারণ আমি কোন শাস্ত্রগ্রন্থ পড়িয়া এমন চমৎকার ব্যাখ্যা ত' কখনো পাই নাই! আমি তখন লজ্জায় অবনত মস্তকে তাঁহাকে বলিলাম যে, 'আমাকে দয়া করিয়া ক্ষমা করিবেন। আমি প্রথমদিন আপনাকে একেবারেই ভুল বুঝিয়াছিলাম।' তদুত্তরে ঠাকুর বলিলেন, "আপনি ত' কোন অন্যায় করেন নাই। আমি একটি যন্ত্রমাত্র, যে যেভাবে বাজাইবে সে সেইরূপই শব্দ পাইবে।"
.
..
ঠাকুর প্রসঙ্গে শ্রী শুভময় দত্ত বাবুকে নোয়াখালী জেলা স্কুলের এসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার।
বর্ত্তমানে সংসারের চক্রে প্রাক্তন দত্ত ভোগের তরঙ্গ চলিতেছে এই ভোগ চিরকালের জন্য থাকিতে পারে না।সর্ব্বদা ভগবানের নাম সঙ্গ করিবেন,ভগবানই উদ্ধার করিবেন।অদৃষ্টচক্রের ভোগ একমাত্র নামই মুক্ত করিয়া থাকেন।
-শ্রী শ্রী রামঠাকুর
বেদবানী ৩য় খন্ড(৯).
নাম প্রাণে করে। ঘুমাইলে জীবের নাম হয়, সেই নাম জাগরণে বিলুপ্ত হইয়া বহু অংশে নানান আখ্যা ধারণ করিয়া নানান রুপ রসে আকৃষ্ট থাকায় নাম যে সর্ব্বদা হয় তাহা জানিতে না পারিয়া প্রকৃতির গুণের দ্বারায় মন বুদ্ধির বৈগুন্যতা দ্বারা নানান বাসনা করিয়া বন্দী হইয়া পড়ে। তাতেই নানান উপাধি মন্ডিত হইয়া ভাগ্যবশে সুখদুঃখ জন্মমৃত্যু এড়াইতে পারে না। অতএব ধৈর্য্য ধরিয়া প্রাণের নিকট থাকিবেন, তবেই নাম শুনিতে পারিবেন।
"বেদবাণী দ্বিতীয় খন্ড,১৭ নং পত্রাংশ।"
(কবিবর নবীনচন্দ্র সেন লিখিত 'আমার জীবন' চতুর্থ ভাগ-প্রচারক না প্রবঞ্চক)
রাম ঠাকুরের বাড়ী বিক্রমপুর, বয়স ২৬/২৭ বৎসর মাত্র। তাঁহার মুখে শুনিয়াছি যে তাঁহার গুরুদেব একজন প্রসিদ্ধ তান্ত্রিক ছিলেন। রাম ঠাকুরের যখন ৮ বৎসর বয়স, তিনি মৃত্যুমুখে তাঁহাকে বলিয়া যান যে, রাম ঠাকুরের সঙ্গে তাঁহার আবার সাক্ষাৎ হইবে। কথাটি শুনিয়া বালকের মনে এক বিপ্লব উপস্থিত হইল। মৃত ব্যক্তির সঙ্গে আবার সাক্ষাৎ হইবে-ইহার অর্থ কি? বালক ইহার কিছুই সিদ্ধান্ত করিতে পারিল না। কিন্তু তাহার প্রাণে এক উদ্যম সঞ্চারিত হইল। তাহার পড়াশুনাতে মন লাগিত না। অবশেষে সে ১২ বৎসর বয়সে গৃহত্যাগ করিয়া নানাস্থানে সন্ন্যাসীর সঙ্গে ভ্রমণ করিতে আরম্ভ করে। একদিন কামরূপের কামাখ্যা দেবীকে প্রণাম করিয়া মন্দির হইতে বাহির হইবে, এমন সময়ে এক পার্শ্ব হইতে কে বলিল, "তুই আমার গাঁজা সাজাইয়া দিয়া যা।" সে ফিরিয়া দেখিল, একজন সন্ন্যাসী। চোখে দেখা হইলে তিনি বলিলেন- “তুই আমাকে চিনিতে পারিতেছিস্ না?” রাম ঠাকুরের বোধ হইল এই কণ্ঠস্বর তাঁহার গুরুদেবের। পরে তাঁহার সঙ্গে বহু বৎসর হিমালয় ভ্রমণ করে এবং মহাত্মাদের কলেবর পরিবর্তন ইত্যাদি বহু অদ্ভুত ব্যাপার দর্শন করে। তাহার গুরুদেব তাহাকে তাহার মাতার মৃত্যু পর্যন্ত সংসারাশ্রমে ফিরাইয়া পাঠান। রাম ঠাকুর তাহার গ্রামস্থ একজন ওভারসিয়ারের পাচক হইয়া নোয়াখালী আসে। গল্প উঠিল যে, একদিন সে আহ্নিকে বসিয়া হঠাৎ বলিয়া উঠিল-"আহা! অমুকের শিশুপুত্রটি মারা গেল।" বাস্তবিক নোয়াখালী শহরের অন্য স্থানে ঠিক সেই সময়ে সেই শিশুটির দৈব ঘটনাতে মৃত্যু হইল। তাহার পর ফেণীতে যে 'জেলখানা' প্রস্তুত হইতেছিল, রাম ঠাকুর তাহার সরকার হইয়া আসিল। লোকে বলিতে লাগিল যে কখনও সখনও তাহাকে গৃহে আহ্নিকে দেখিয়াছে এবং পরের মূহুর্তে রাম ঠাকুর অদৃশ্য হইয়াছে। কেহ তাহাকে রাত্রিশেষে রক্তচন্দন-চর্চিত অবস্থায় কোনও বৃক্ষ হইতে অবতরণ করিতে দেখিয়াছে। সর্প দংশন করিতে, গরু মহিষ মারিতে আসিতেছে, আর রাম ঠাকুর বারণ করা মাত্র চলিয়া গিয়াছে। নিজে কিছুই আহার করে না। কদাচিৎ দুগ্ধ বা
শতবার্ষিকী স্মারক গ্রন্থ
#বেদবানী_প্রথম_খন্ডঃ
(৫৫) কর্ত্তা কর্ম্ম হইতে লাভ লোকসান দ্বারা ব্যতিব্যস্ত হয়, অকর্ত্তার কোন অভাবই থাকে না।
(৫৬) সংসারের সারই ভগবান, জীব ভাবের এই শক্তি।
(৫৭) পতিব্রতা ধর্ম্ম
অনন্যাশ্চিন্তয়ন্তো মাং যে জনা পর্য্যুপাসতে।
তেষাং নিত্যাভিযুক্তানাং যোগক্ষেমং বহাম্যহম॥
এই যে ভাব ইহা ছাড়া আর কিছুই চায় না, জানে না, অন্য কিছুর দরকার নাই। মহা ঐশ্বর্য্য প্রলোভনের আবাহনকেও তুচ্ছ করে। তাহাকেই পতিব্রতা ধর্ম্ম বলে। গুরু ধ্যানং তথা নিত্যং দেহী ব্রহ্মময়ো ভবেৎ ইত্যাদি। গুরু ব্রহ্মা গুরুঃ বিষ্ণু গুরুর্দ্দেব গুরুর্গতিঃ, গুরুরেব পরং ব্রহ্ম তস্মৈ শ্রীগুরুবে নমঃ ইত্যাদিতে পতিব্রতা জাগাইয়া রাখিয়াছে। অর্থাৎ অদ্বৈত ভাব হৃদয়ে রাখা।
শ্রীশ্রী রাম ঠাকুর 🙏🙏🙏🙏
#জয়গুরু জয় রাম জয় গোবিন্দ🙏
বেদবাণী তৃতীয় খন্ড ৬৩ নং পত্রাংশ 🙏🌺🙏
সংসার মায়াময়, কর্ত্তৃত্বাভিমানে জরাজীর্ণ থাকায় সৎসঙ্গ ভ্রম হইয়া নানাবিধ ভোগ বিলাসে চিত্ত আবর্জ্জনা থাকে। অতএব সর্ব্বদাই অকর্ত্তা হইতে যত্নশীল থাকাই জীবদ্দশার কর্তব্য। ন" কর্ত্তৃত্বং ন কর্ম্মানি লোকস্য সৃজতি প্রভুঃ।ন কর্ম্মফলংসংযোগং স্বভাবস্তু প্রর্বত্ততে।' অতএব কর্ত্তৃত্বাভিমান না থাকাই জীবের স্বভাব। গুণের মধ্যে কর্ত্তৃত্ববুদ্ধি হইয়া স্বভাব গুনগত দাসত্ব শৃঙ্খলে বন্ধি হইয়া গুনাবর্ত্তে নানাই বাসনায় জড়ীভূত হয়।এই কারনে সুখী, দুঃখী লাভ লোকসান, ইত্যাকার দ্বন্দ্বজ জ্ঞান হয়।দুঃখ মোচন জন্য সৎ অসতের আবরণে পড়ে বলিয়াই জন্ম মৃত্যু ঘোষণা থাকে। অতএব সকল অবস্থায় সর্ব্বতোভাবে বুদ্ধিকে স্থিরহে রাখিবার চেষ্টা করিতে করিতে বুদ্ধি ও নিদ্রিতাবস্থার ন্যায় অকর্ত্তা হইয়া স্বপ্নের ন্যায় প্রারম্ভেকর্মের ভোগ ইন্দ্রিয়াদির ক্রিয়া সাধন সমাপ্ত হয়।অথাৎ স্বপ্নের মধ্যে যেমন নানান স্থানে গতাগতি কথাবার্তা ইন্দ্রিয়াদির ক্রিয়া হয়,নিদ্রাভঙ্গ হইলে তাহার অস্তিত্ব কিছুই থাকে না,সেইরূপ জাগ্রত অবস্থায় বিষয়কর্ম ইন্দ্রিয়াদির দ্বারাই সমাপণ করিয়াও তাতে অস্তির বুদ্ধি মিশে না।এইভাবে সংসার বন্ধন মুক্ত হইয়া দেহত্যাগ প্রাপ্ত হয়,ইহায় মুক্তি। এই পদ ভিন্ন বাসনাদি দ্বারায় আবদ্ধ থাকায় সংস্কার (?) বশত দেহত্যাগ করিতে পারে না।বাসন পূরণ জন্যই ভুয় ভুয় শরীর ধারণের দরকার হয় বলিয়া মুক্তি পায় না।
ভাগ্যং ফলতি সর্ব্বত্রং।সত্যনারায়নের সেবা করুন তাঁর ভাগ্য নাই,প্রকৃতি হইতেই বিভক্ত হইয়া থাকে।সেই প্রকৃতি ত্রিগুণের বশে আকৃষ্ট হইয়া বহু রকম অবস্থায় বিকৃত হইয়া নানান উপাধি সাগরে উর্দ্ধ অধ: গতিদ্বারা জীবগণের লাঞ্চনা ভোগ সর্ব্বদা ঘটিয়া থাকে।মনের দ্বারাই এই ভোগ হয়।.........সঙ্করের নিকট ঋণ দায়ে ত্রিলোক ঠেকা হেতু কালচক্রে সকল ঘুরিয়া বেড়ায়।ইহাকেই জন্মমৃত্যু বলে।ভাগ্য অনুসারে যোগাযোগ,আপন-পর,শত্রু-মিত্র,শান্তি-অশান্তি,সুখ-দু:খ লাভ করে।ইহাই ভোগ বলিয়া জানিতে হয়।ভাগ্য ভোগ দান [ত্যাগ] হইলে সত্যনারায়ণকে পাওয়া যায়,তাঁহাকে পাইলে ভাগ ভোগ থাকে না।কারণ প্রকৃতির সীমার পার হয়।ইহাকেই প্রাণ (পরায়ণ) বলিয়া জানিবেন।ইহাকেই সত্য-নারায়ণের সিন্নি (ভিন্ন বুদ্ধি না করা),ইহাকেই সত্যনারায়ণের সেবা বলে।............অহংকার অর্থাৎ সীমাবদ্ধ হইয়া কর্ত্তা অস্থায়ী বিচার করিয়া তাতে আবদ্দ থাকে।তাহাতেই আপনার দোষ না দেখিয়া পরদেহে দোষ দৃষ্টি দর্শন করে।যেমন মেঘ সূর্য্যকে আচ্ছন্ন করে,সূর্য্য তাতে মলিন হয় না,সে পবিত্রই থাকে।মেঘই নষ্ট হইয়া পড়ে।অহংকার দোষই যাইবে,কিন্তু পিতা-মাতা নষ্ট হয় না।পিতাস্বর্গ: পিতাধর্ম্ম: পিতাহি পরমন্তপ:।পিতৃসেবায় রত সত্যবানের উপাখ্যান দ্রষ্টব্য।পুত্র কর্ত্তৃত্ব করিয়াই মাতৃকোল অধীরতা (অসত্যতা) হেতু কর্ত্তাপাশে বদ্ধ হইয়া মায়ের কোল ত্যাগ করিয়া বিবিধ পাশে বদ্ধ হইয়া এই ভবাদ্ধি অকূল সাগরে উর্দ্ধ অধ:-গতিতে জীব সকল লাঞ্চিত হইয়া থাকে।কাজেই পিতামাতা যে সত্যব্রত ভুলিয়া স্বয়ং কর্ত্তা হইয়া দিশাহারা হয়।যাহা হউক,সত্য-নারায়ণের ব্রত ভুলিবেন না।.........ভগবানের পিতৃমাতৃ দত্ত দুটি কুল,উভয়ের দোষগুণ পরিত্যাগ করিয়া ধৈর্য্যের দ্বারা প্রাণে প্রাণে অভিন্নরুপে পিতামাতার সেবাকার্য্যের শক্তি আহরণ করুন,ইহাতে পিতা মাতা পুত্র তিন কুল মুক্ত করিতে পারিবেন।তখন সত্যবস্তুর উপলব্ধি হইবে,স্বরুপ পাইবেন।
-শ্রী শ্রী রামঠাকুর
বেদবানী ৩য় খন্ড(৬).
জয়রাম। জয়গোবিন্দ। দয়াল গুরু শ্রীশ্রী রামঠাকুর এর কথা.
Reviewed by শ্রী শ্রী সত্যনারায়ণ নমঃ(SriSriramthakur O gan Ganer vhovon Youtube channel)
on
July 26, 2024
Rating:

No comments: