শ্রীশ্রী রাম ঠাকুরের কথা
বাংলাদেশের শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার অগ্রগণ্য এক গ্রাম #ডিঙ্গামানিক।
এই গ্রামের গর্ব-রাঢ়ীয় ভরদ্বাজ গোত্রের ব্রাহ্মণ কুলীয় ‘বিদ্যালংকার’ পরিবার, ‘পিতা’ শ্রীরাধামাধব বিদ্যালংকার এবং ‘মাতা’ শ্রীমতি কমলা দেবীর তনয়রূপে ১২৬৬ বঙ্গাব্দের একুশে মাঘ, ১৮৬০ খৃষ্টাব্দের দোসরা ফেব্রুয়ারি, বৃহস্পতিবার ব্রাহ্মমূহুর্তে, রোহিনী নক্ষত্রে, শুক্লা দশমী তিথিতে-আবির্ভূত হয়েছিলেন পরম দয়াল ‘#শ্রীশ্রীরামঠাকুর’।
‘শ্রীশ্রীরামঠাকুর’ এর শ্রীদেহে থাকাকালীন ভারতবর্ষ দেখেছে দু’ দুটি #বিশ্বযুদ্ধ, পারমাণবিক বিস্ফোরণ, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের নিপীড়ন, দুর্ভিক্ষ, দাঙ্গা এবং রাজনৈতিক আন্দোলনের ঘটনা পরম্পরা, সকল সংকটে রামঠাকুর দাঁড়িয়েছেন আর্ত মানবতার পাশে, দ্বারে দ্বারে ঘুরে যুগিয়েছেন সাহস, আশা এবং আশির্বাদ, রামঠাকুর ‘সেবা’ করেছেন সর্বজীবের, পথনির্দেশনা দিয়েছেন ‘সত্য ও শান্তি’র, অপার করুণাধারায় তিনি ঋদ্ধ করেছেন শত সহস্র মানুষের জীবন।
#চৌমুহনী, নোয়াখালীতে, ১৩৫৬ বঙ্গাব্দের ১৮ বৈশাখ, ১৯৪৯ খৃষ্টাব্দের পয়লা মে, রবিবার,।পুণ্য অক্ষয় তৃতীয়া তিথিতে অগণিত ভক্তের প্রাণের ঠাকুর নশ্বর দেহ ত্যাগ করে অপ্রকট হলেন। ৯০ বছর বয়সে #মহাপ্রস্থান করেন সকলের ‘রামভাই’ শ্রীশ্রীরামঠাকুর।
মানব সম্প্রদায়কে কালের পাকচক্র থেকে মুক্ত করার জন্য-পরম দয়াল ‘#শ্রীশ্রীরামঠাকুর’ সবাইকে দিয়েছেন আত্মসিদ্ধি, ভক্তিযোগ এবং সকল জীবের সেবা করার ‘দীক্ষা’। সেই ‘দীক্ষা’র আলোয় আলোকিত হতে-সকলেই সামিল রামমন্ডলীর এই জনারণ্যে।
উদার ‘মানবধর্মে’ বিশ্বাসী শ্রীশ্রীরামঠাকুর সমাজ-জাতি-ধর্ম-বর্ণের বৈষম্যরেখা ঘুচিয়ে দিয়ে, সবাইকে আপন করেছেন সমান ভালোবেসে। #রামঠাকুরভক্তরা সে ‘আদর্শে’রই অনুসারী।
অযাচিত কৃপা, সেবাপরায়ণতা, মানবপ্রীতি, মধুর কথন, বিনম্র ব্যবহার, সহানুভূতি-অনুকম্পা-করুনার অপার দানে ‘রামঠাকুর’ অনন্য, এই বিশ্বসংসার তাঁর ‘পরিবার’, সকলেই তাঁর ‘আপনজন’।
শ্রীশ্রীরামঠাকুর #পূর্ণব্রহ্ম_সনাতন, শঙ্খচক্রগদাপদ্মধারী নারায়ণ, গোবিন্দ, ভগবান, শ্রীহরি, শচীগর্ভসম্ভূত গৌরাঙ্গদেব, জগন্নাথ, সত্যনারায়ণ রপে ভাগ্যবান ভক্তদের কাছে প্রকটিত হয়েছেন। স্পষ্টাক্ষরে বলেছেন, “অন্নপূর্ণা, শিবনাথ, কি ব্রজনাথ, ইনিই রামসীতা, কি রাধাকৃষ্ণ, ইনিই ভগবান, ইনিই আমি।”
(শ্রীশ্রীরাম ঠাকুরের মাহাত্ম্য প্রচারে- কৈবল্য ভুবন ।)
যোগমায়ার আবৃত তাঁর তনু তাই সকলের কাছে প্রকাশিত না হলেও তৎকালীন মহাপুরুষদের উপলদ্ধিতে তাঁর স্বরূপটি তো প্রচ্ছন্ন থাকেনি। শ্রীশ্রীঠাকুরের শ্রীমুখের বাণী চয়নেই তাঁর স্বরূপটি প্রকটিত হয়েছেঃ
১। এ #বিশ্বরূপ দর্শন একবার এক গর্বিত পন্ডিতের হয়েছিলঃ পূর্ববঙ্গের ভৈরব ষ্টেশনের রেল আবাসনে ললিত রায় মহাশয়ের বাড়ী ঠাকুর আছেন। একদিন সকাল বেলায় জাতিতে ব্রাহ্মণ, স্থানীয় একজন তথাকথিত পন্ডিত শ্রেণীর ব্যক্তি...পান্ডিত্যের গৌরবে গর্বিত হয়ে উচ্চকণ্ঠে বলতে লাগলেন, কৈ গো তোমাদের রামঠাকুর, তিনি নাকি ভগবান, তানরে একবার দেইখা যাই।” গৃহমধ্যে ভক্ত পরিবৃত হয়ে ঠাকুর মহাশয় একখানা তক্তাপোষের উপর তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গীতে বসে আছেন। উদ্ধত পন্ডিতের সম্মুখে দন্ডায়মান পূর্বক তার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে উদাত্তকণ্ঠে বলতে লাগলেন, “পূর্ণব্রহ্ম সনাতন, সৃষ্টি-স্থিতি-প্রলয় কারণ #সত্যনারায়ণ_আমিই_সেই_রামঠাকুর।”
পান্ডিত্যের অহঙ্কারে অহষ্কারী পন্ডিতপ্রবর...ঠাকুরের মধ্যে কী দেখলেন তা তিনিই জানেন।... পন্ডিত মুহুর্তের মধ্যে থর থর করে কাঁপতে কাঁপতে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় ভূপতিত হলেন।... কিছুক্ষণ পরে সংজ্ঞা ফিরে আসলে দাম্ভিক পন্ডিত শ্রীশ্রীঠাকুরের সম্মুখে হাঁটু গেড়ে বসলেন। তারপর হাত জোড় করে কম্পিত কণ্ঠে...#গীতার একাদশ অধ্যায় বিশ্বরূপ দর্শন সস্পূর্ণ আবৃত্তি করতে করতে মুহূর্মুহূ কেঁপে উঠছিলেন ঠাকুর মহাশয় তাঁর আসনে স্থির হয়ে বসেছিলেন।
২। শ্রদ্ধেয় উপেন্দ্র সাহা মহাশয় ঠাকুরকে প্রণাম করে মাথা তুলে কদম বৃক্ষের নীচে চতুর্ভুজ শঙ্খ-চক্র-গদা-পদ্মধারী #নারায়ণমূর্ত্তি দর্শন করার সৌভাগ্য লাভ করেছিলেন।
৩। “রামঠাকুরের কথা” বইটিতে ইন্দুবাবুর দর্শন ও উপলব্ধি বর্ণিত আছেঃ “ঠাকুর আমাকে লইয়া একখানি খালি বেঞ্চে (হেদুয়া পার্কে) বসিলেন। সামান্য দু একটি কথাবার্তার পর ঠাকুর আকাশের দিকে তাকাইয়া রহিলেন। আমিও তাহাই করিলাম। হঠাৎ ঠাকুরের দিকে তাকাইয়া দেখি যে তাহার মুখশ্রী একেবারেই বদলাইয়া গিয়াছে। দেখিলাম যেন একটি ১৫/১৬ বৎসরের #কিশোর আমার পাশে বসিয়া রহিয়াছেন। কি অপূর্ব সেই মূর্ত্তি সেই আকর্ণ বিস্তৃত চক্ষু যুগল, সেই স্থির প্রশান্ত দৃষ্টি, মুখশ্রীর সেই অপার্থিব মধুরিমা, বহু সুকৃতিবলেই সেদিন আমার দৃষ্টিগোচর হইয়াছিল।”
৪। শ্রীশ্রীরামঠাকুরের স্বরূপ- শ্রীশ্রীঠাকুরের অনুগ্রহে ঠাকুরের পরম প্রিয় ফণীন্দ্র কুমার মালাকারের অভিজ্ঞতাটুকু জানুন। শ্রীশ্রীঠাকুর বলেছেন- “গুহ্যকালী! আসিয়াছিলাম #শ্রীধর_ঠাকুর, ভাবিয়াছিলাম কিছু দিয়া যাইব কিন্তু কেহ নিল না; রাখিয়া গেলাম যদি কোন ভাগ্যবান কুড়াইয়া লয়।”
ঠাকুরের এই কথাটির যথার্থ অর্থ নির্ণয় করা সম্ভব নয়। তবে ফণীবাবু যথানিয়মে একদিন প্রণাম করতে গেছেন এবং ঠাকুরের শ্রীচরণ ষ্পর্শ করে প্রণাম করবেন! কিন্তু হঠাৎ সেখানে দেখলেন ছোট ছোট দুখানা গাঢ় নীল রংএর পা। প্রথমে তিনি বুঝে উঠতে পারলেন না। তিনি ঐ পদযুগলে হাত রেখে ঠাকুর প্রদত্ত নাম স্মরণ করতে করতে উপর দিকে আস্তে আস্তে তাকিয়ে #মা_কালীর_চিন্ময়ীরূপ দর্শন করলেন। প্রণাম শেষ করে চোখ খুলে দেখলেন সেখানে ঠাকুর যেমন পূর্বে ছিলেন তেমন আছেন, মায়ের মুর্ত্তি নেই। যখন মা-কালীর চিন্ময়ী মূর্ত্তি দর্শন করেছিলেন,তখন ঠাকুরকে ঘরে দেখতে পাননি। এবার ঠাকুরকে দেখলেন, মায়ের মুর্ত্তি দেখতে পেলেন না। এই ঘটনার পর তিনি পরিষ্কার জানতে পারলেন, ঠাকুরই গুহ্যকালী।
(শ্রীশ্রীরাম ঠাকুরের মাহাত্ম্য প্রচারে- কৈবল্য ভুবন ।)
৫। ঠিক অনুরূপ উপলদ্ধি রোহিণীকুমার মজুমদার মশাই এর হয়েছিল। রোহিণীবাবু শ্রীশ্রীঠাকুরের পট উত্তরমুখী হয়ে পূজা শেষে পশ্চিমমুখী হয়ে #কালীস্তোত্র পাঠ করতেন। সেই ঘটনা উপলক্ষে রোহিণীবাবু লিখেছিলেন, আমি মনে করিতাম দক্ষিণাকালী ও ঠাকুর এক নন। আমি শয়ন করিয়া আছি, হঠাৎ দেখি ঠাকুর উঠিয়া বসিয়া আমাকে বলিতেছেন--“আমার মধ্যে সব আছে, বিশ্বাস হয় না?” তবে এই দেখেন এই বলিয়া দুই হাত দুই দিকে প্রসারিত করিলেন। সঙ্গে সঙ্গে দুদিক হইতে হস্ত বাহির হইতে আরম্ভ করিল। আমি কিংকর্তব্যবিমুঢ় হইয়া বলিলাম, “না,না,আর না।” বলিয়া দুই হাত জোড় করিয়া প্রণাম করিলাম। শ্রীশ্রীঠাকুর তখন হাসিতে হাসিতে বলিলেন,“এইবার বিশ্বাস হইয়াছে যে আমার মধ্যে সবই আছে? সবই এক, #ঐ_ফটোতে_প্রকট_হয়।” সেইদিন হইতে আমার সংশয় ঘুচিয়া গেল। বুঝিলাম আমার পরমারাধ্য ঠাকুর স্বয়ং পূর্ণব্র্রত নারায়ণ।”
৬। শ্রীমতী ফাল্গুনী সেনগুপ্ত লিখিত ‘শ্রীরামজিজ্ঞাসা-বইটিতে ঠাকুরের উক্তিটি প্রণিধানযোগ্য। তিনি একদা ফণীন্দ্র কুমার মালাকারকে বলেছিলেন, “জান, অন্নপূর্ণা কি বিশ্বনাথ কি শিবনাথ, কি ব্রজনাথ ইনিই রামসীতা, কি রাধাকৃষ্ণ, ইনিই #ভগবান, ইনিই আমি।”
৭। আসামে অবস্থানকালে ঠাকুর অসুস্থ হয়ে পড়াতে ভক্তবৃন্দ নাগা সন্ন্যাসীদের দিয়ে কিছু ক্রিয়া কলাপের সাহায্যে ঠাকুরের সুস্থতা সম্পাদনের জন্য তাদের নিয়ে এসেছেন। নাগা সন্ন্যাসীরা ঠাকুরের কাছে এসেই ভক্তবৃন্দকে বলেছিলেন, “এ কার জন্য পূজা করতে নিয়ে এসেছেন? যেখানে যত পূজা হয়, সবই তো এসে এই চরণেই পড়ে।”
(শ্রীশ্রীরাম ঠাকুরের মাহাত্ম্য প্রচারে- কৈবল্য ভুবন ।)
#বিশ্বকবি_রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে ঠাকুরের সাক্ষাৎ পরিচয় হয়নি। ডাঃ জে. এম. দাশগুপ্ত তাকে ঠাকুরের আধ্যাত্মিক উপদেশ সম্বলিত কতগুলি পত্র পাঠ করতে দিয়েছিলেন। সেইগুলি ফেরৎ দেওয়ার সময় কবিবর ডাক্তারবাবুকে বলেছিলেন “মানুষ বলে সমুদ্রের কোন কুল কিনারা নাই। আমি বলি, সমুদ্রেরও একটা কুল কিনারা আছে, কিন্তু তোমার #ঠাকুরের_কোনই_কুল_কিনারা_নাই।”
কথাশিল্পী_শরৎচন্দ্র_চট্টোপাধ্যায়ের উক্তিটিও প্রণিধানযোগ্য। ‘শ্রুতিতে রামঠাকুর’ থেকে উৎকলিত, “তার কাছে যখনই থেকেছি মনে হয়েছে সব-পেয়েছির দেশে বাস করছি। দূরে গেলে সে সুর হারিয়ে ফেলি। হারানো সে সুর আর খুঁজে পাইনা। তাই তো আবার তাঁকে দেখতে চাই।”
শ্রীশ্রীরামঠাকুর প্রথম জীবনে খুবই প্রচ্ছন্ন ছিলেন। তবু তার যোগবিভূতিগুলি ধীরে ধীরে জনসাধারণের চক্ষে প্রকটিত হয়ে পড়েছিল, এর কারণ তিনি নিজেই বলেছেন, “যাহারা মহাজন, যোগৈশ্বর্য্যগুলি তাঁহাদের পরিচর্য্যার প্রতীক্ষায় সর্বদাই সঙ্গে সঙ্গে থাকে। মহাজনরা সেদিকে দৃকপাত করেন না, কিন্তু কখনও কখনও কোন বিশেষ কারণে ঐ সকল যোগ-বিভৃতি প্রত্যক্ষ হইয়া পড়ে।”
ব্রহ্মঃ ঠাকুর বললেন, “ব্রহ্মের আবার দিগবিদিক কি? ব্রহ্ম সর্বদিকে বিরাজ করেন। যেইভাবে বসাইলে আপনি আনন্দ পান সেইভাবে বসান গিয়া। আনন্দ পাওয়া নিয়া কথা।” ফণীবাবু লিখেছেন, ঠাকুরের কথা বিচার করিলে দেখবেন ভদ্রলোক কৈবল্যনাথ বিগ্রহ বসাবেন, আর ঠাকুর বললেন ব্রহ্মের দিগবিদিগ নাই। ব্রহ্ম সকল দিকে আছেন। তা হলে বিচারে পাওয়া গেল ঠাকুর প্রকারান্তরে নিজেকে ব্রহ্ম বলে স্বীকার করলেন।
#নারায়ণঃ একজন প্রবীণ ভক্ত স্নান করে সিক্ত বসনে সচন্দন তুলসী হস্তে ঠাকুরের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন লক্ষ্য করে ঠাকুর চরণ দু‘খানি প্রসারিত করে দিলেন। কিন্তু তিনি সচন্দন তুলসীপত্র নিয়ে ঠাকুরের নিকট যেয়ে হস্ত প্রসারণ করে ঠাকুরের বক্ষঃস্থলের নিকট নিতেই ঠাকুর প্রশ্ন করলেন-“এইগুলি কোনখানে দিবেন?” তিনি বললেন-“বাবা সচন্দন তুলসীপত্র আপনার বক্ষে দিব।” ঠাকুর চরণ দু-খানি দেখিয়ে বললেন, “তুলসীপত্রের স্থান নারায়ণের শ্রীদেহের অন্য কোথাও না। উহার স্থান নারায়ণের চরণযুগলে।” তা হলে বিচারে পাওয়া গেল ঠাকুর প্রকারান্তরে নিজেকে নারায়ণ বলে স্বীকার করলেন।
(শ্রীশ্রীরাম ঠাকুরের মাহাত্ম্য প্রচারে- কৈবল্য ভুবন ।)
#শ্রী_হরিঃ চাঁদপুরে শ্রীশ্রীঠাকুর মোক্তার বসন্ত কুমার মজুমদার মহাশয়ের স্ত্রীর মৃত্যুর সময় তার শিয়রে দাড়িয়ে বলেছিলেন, “দেখেন আপনার শিয়রে স্বয়ং শ্রীহরি দন্ডায়মান।” তা হলে বিচারে পাওয়া গেল ঠাকুর প্রকারান্তরে নিজেকে শ্রীহরি বলে স্বীকার করলেন।
#গোবিন্দঃ “কৃপাসিন্ধু রামঠাকুর” গ্রন্থে শ্রীমনোরঞ্জন মুখুটি লিখেছেন, একদিন আমি ও প্রভাতদা ঠাকুরের সঙ্গে শা-নগর এক ভক্তের বাড়ী উপস্থিত হই। ভক্তপ্রবর দরজা খোলা মাত্রই ঠাকুর বললেন, “আজ আপনার দরজায় স্বয়ং গোবিন্দ উপস্থিত।” তা হলে বিচারে পাওয়া গেল ঠাকুর প্রকারান্তরে নিজেকে গোবিন্দ অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণ বলে স্বীকার করলেন।
#জগন্নাথঃ “কৃপাসিন্ধু রামঠাকুর” গ্রন্থে শ্রীমনোরঞ্জন মুখুটি লিখেছেন, “ঠাকুর একবার আমার সেজ ভ্রাতার কালির কারখানা, সদানন্দ রোডে অসুস্থ হয়ে গুপ্তভাবে অবস্থান করছিলেন। তখন নিজমুখে একদিন আমার সেজভাইকে বলেছিলেন-“আমিই জগন্নাথ।” তা হলে বিচারে পাওয়া গেল ঠাকুর প্রকারান্তরে নিজেকে জগন্নাথ বলে স্বীকার করলেন।
#গৌরাঙ্গদেবঃ “রামভাই স্মরণে”, ঠাকুরকে রাজসূয় যজ্ঞের মালসা ভোগ দিতে ভুলে যাওয়ায়, শ্রীশ্রীঠাকুর ভক্তবৃন্দের কাছে মালসা ভোগের নাম ও কাহিনী বলতে বলতে তন্ময় হয়ে ওঠেন এবং ভাবাবেশে বলেন, “আমিই গৌরাঙ্গদেব।” তা হলে বিচারে পাওয়া গেল ঠাকুর প্রকারান্তরে নিজেকে গৌরাঙ্গদেব বলে স্বীকার করলেন।
ফেনীতে প্রমথবাবুর বাসায়
শ্রীশ্রীসত্যনারায়ণের পূজার পর ঠাকুর স্বাভাবিক অবস্থায় বার বার বলতে লাগলেন, “#আমিই_ত_সত্যনারায়ণ, আমিই ত সত্যনারায়ণ, আমিই ত সত্যনারায়ণ; শত শত ধারাল অস্ত্র নিক্ষেপ করিয়াও আপনাদের কেহই কিছু করিতে পারিবেনা।” তুলসীবাবুর এ সময় ঠাকুরের উক্তিটিও মনে পড়েছিল, “সৃষ্টিস্থিতি-প্রলয়ের কারণ পূর্ণব্রত সত্যনারায়ণ এই রামচন্দ্র।”
শ্রীশ্রীসত্যনারায়ণের পূজার পর ঠাকুর স্বাভাবিক অবস্থায় বার বার বলতে লাগলেন, “#আমিই_ত_সত্যনারায়ণ, আমিই ত সত্যনারায়ণ, আমিই ত সত্যনারায়ণ; শত শত ধারাল অস্ত্র নিক্ষেপ করিয়াও আপনাদের কেহই কিছু করিতে পারিবেনা।” তুলসীবাবুর এ সময় ঠাকুরের উক্তিটিও মনে পড়েছিল, “সৃষ্টিস্থিতি-প্রলয়ের কারণ পূর্ণব্রত সত্যনারায়ণ এই রামচন্দ্র।”
একদিন বোমা বর্ষণের সময় মাধবচন্দ্র মজুমদার মশাই ঠাকুরকে ট্রেনে যেতে অনুরোধ করলে #ঠাকুরমশাই_বলেছিলেন, “আমার মাথায় বজ্র পড়িবে,সেই বজ্র আজও তৈয়ার হয় নাই।”
সুতরাং দেখা যায় সমসাময়িক মহাপুরুষদের দৃষ্টিতে, কোন কোন ভাগ্যবান আশ্রিতবর্গের উপলদ্ধিতে এবং শ্রীশ্রীঠাকুরের শ্রীমুখের উক্তিতে তিনিই “#ষড়ৈশ্বর্য্যশালী_ভগবান।”
আমাদের মত সাধারণের কাছে তিনি পতিতপাবন রামঠাকুর। আমাদের মত পতিতদের উদ্ধারের জন্য তিনি পতিতপাবন রূপে দাঁড়িয়েছেন সমভূমিতে।
কিন্তু কেন তার এই প্রচ্ছন্নতা? - “পাছে আমরা অলৌকিকতার অন্তরালে সে অহৈতুকী কৃপাসিন্ধু স্বভাব প্রেমিক সহজ সরল মানুষটিকে হারিয়ে ফেলি, তাঁর ও আমাদের মধ্যে এক দুরতিক্রমণীয় ব্যবধান সৃষ্টি করি, বোধ করি সেজন্যই তিনি সতত নিজেকে প্রচ্ছন্ন রাখতেন।”
জয়রাম, জয়গোবিন্দ॥
No comments:
Post a Comment