‘ঠাকুর, আপনি আমাদের বাঁচাতে নিজে বিষপান করলেন! ঠাকুর আপনি তো আমাকে বলতেই পারতেন, আমি সব মাংস ফেলে দিতাম’।
‘ঠাকুর, আপনি আমাদের বাঁচাতে নিজে বিষপান করলেন! ঠাকুর আপনি তো আমাকে বলতেই পারতেন, আমি সব মাংস ফেলে দিতাম’।
মজঃফরপুরের স্বনামধন্য ব্যক্তি রোহিণী মজুমদার। এলাকায় তাঁর প্রভাব প্রতিপত্তি যথেষ্ট। সেই রোহিণী মজুমদারের অনুরোধে ঠাকুর একবার তাঁর বাড়িতে গিয়েছেন। ঠাকুরের আগমনে উচ্ছ্বসিত রোহিণীবাবু এলাকার বেশ কিছু মানুষকে তাঁর বাড়িতে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। অতিথি অভ্যাগতদের জন্য রাতে মাংস-ভাতের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
পার্থিব সব জিনিসের মতো খাবার সম্পর্কেও ঠাকুর চিরকালই নির্লিপ্ত। একটু জল, দু’চারটে যজ্ঞি ডুমুর, কয়েকটা বেলপাতা বা একটা ফল খেয়েই তিনি চার-পাঁচ দিন কাটিয়ে দিতে পারেন, অথচ তাঁর শরীরে কোথাও অনাহারের সামান্য চিহ্নও ফুটে ওঠে না। রোহিণীবাবু ঠাকুরের জন্য ফল মিষ্টির ব্যবস্থা করলেও তিনি জানেন ঠাকুর ও সব ছুঁয়েও দেখবেন না।
ঠাকুরের সঙ্গে সাক্ষাৎপর্ব শেষ করে অতিথিরা এ বার খেতে বসবেন। সব আয়োজন সম্পূর্ণ, হঠাৎ ঠাকুর বললেন যে তিনি মাংস খাবেন। উপস্থিত সকলে চমকে উঠলেন। যে মানুষটা সারা দিনে একটা ফলও খায় না, সে আজ মাংস খেতে চাইছে! রোহিণীবাবু উল্লসিত, তাঁর বাড়িতে পরমপুরুষ শ্রী রামঠাকুর মাংস খাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন... এ তাঁর পরম সৌভাগ্য। সঙ্গে সঙ্গে তিনি ঠাকুরকে এক বাটি মাংস এনে দিলেন। মুহূর্তের মধ্যে সেই মাংস খেয়ে নিয়ে ঠাকুর বললেন, ‘আরও মাংস নিয়ে এসো, তোমাদের কাছে যা আছে সব নিয়ে এসো’।
রোহিণীবাবুর স্ত্রী তো আনন্দে আত্মহারা! তিনি যত্ন করে ঠাকুরকে খাওয়াতে লাগলেন। উপস্থিত সকলে অবাক হয়ে দেখল, ঠাকুর একটু একটু করে রান্না হওয়া সব মাংসই খেয়ে নিয়েছেন, অতিথি অভ্যাগতদের জন্য এক টুকরোও অবশিষ্ট নেই।
সে দিন রাত থেকেই ঠাকুরের পেটে অসহ্য যন্ত্রণা হতে শুরু করল। রোহিণীবাবু কী করবেন, বুঝে উঠতে পারলেন না। ঠাকুর তাঁকে আশ্বাস দিয়ে বললেন, ‘চিন্তা কোরো না রোহিণী , আমি ঠিক সুস্থ হয়ে উঠব’।
তিন দিন পর সুস্থ হয়ে ঠাকুর রোহিণীবাবুকে বললেন, ‘বুঝলে রোহিণী, আমি জানতে পেরেছিলাম যে ওই মাংসে বিষ আছে, ওটা খেলে সে দিন অনেকেই মারা যেত, তাই বাধ্য হয়েই...’
রোহিণীবাবু চমকে উঠে ঠাকুরকে বললেন, ‘ঠাকুর, আপনি আমাদের বাঁচাতে নিজে বিষপান করলেন! ঠাকুর আপনি তো আমাকে বলতেই পারতেন, আমি সব মাংস ফেলে দিতাম’।
মৃদু হেসে ঠাকুর বললেন, ‘তা কী করে হয় রোহিণী, ফেলে দিলে ওগুলো কাক, কুকুর, বেড়ালে খেয়ে মরে যেত। যে মাংস খেলে মানুষ মরে যাবে, সেই মাংস আমি কী করে কুকুর বেড়ালের মুখে তুলে দিই বলো! রোহিণী, ওরাও তো ভগবানেরই সন্তান’।
এ ভাবেই ভক্তদের বিপদ-আপদ, রোগ-ব্যাধি নিজের শরীরে ধারণ করে তাঁদের রক্ষা করতেন পরমপুরুষ রামঠাকুর। এ প্রসঙ্গে তাঁর অনেক অলৌকিক কাহিনি লোকমুখে শুনতে পাওয়া যায়। তাঁর এক প্রিয় শিষ্য ড. ইন্দুভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ঠাকুরের অনেক অলৌকিক কাহিনির সাক্ষী ছিলেন। তাঁর সেই সব প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার কথা তিনি লিপিবদ্ধ করে গিয়েছেন।
‘ঠাকুর, আপনি আমাদের বাঁচাতে নিজে বিষপান করলেন! ঠাকুর আপনি তো আমাকে বলতেই পারতেন, আমি সব মাংস ফেলে দিতাম’।
Reviewed by srisriramthakurfbpage
on
March 10, 2024
Rating:
No comments: