শ্রীমৎ শ্যামদাদার আত্মকথা
কয়েকদিন ডিঙ্গামাণিক ও তৎপার্শ্ববর্ত্তী স্থান সমূহে অবস্থান করিয়া ঠাকুর আমাকে লইয়া ঢাকা রওনা হইলেন। ঢাকায় বেশী দিন অপেক্ষা করিলেন না। এবার আমাকে লইয়া মানিকগঞ্জ গেলেন।শ্বশুর মহাশয়ের বাসায় যাবার সাধ মিটাইলেন,কিন্তু মাত্র একদিন থাকিয়া পরবর্ত্তী ষ্টীমারেই আমাকে লইয়া ঢাকায় ফিরিয়া চলিলেন। ষ্টীমারে কতিপয় মৌলভী সাহেব কোরাণের আলোচনা ও বিচার করিতেছিলেন। ঠাকুর কোরাণ হইতে কয়েকটা সুরা আবৃত্তি করিয়া তাঁহাদিগকে উহাদের অর্থ ও তাৎপর্য্য বুঝাইয়া দিলেন। মৌলভীগণ এক সামান্য কাঙ্গালের বেশধারী হিন্দুর মুখে চমৎকার ব্যাখ্যা শুনিয়া চমৎকৃত হইলেন।
ষ্টীমার ধামড়াইল ষ্টেশনে আসিয়া দাঁড়াইল।যাত্রীগণ তীরে যাইয়া স্নান-আহার সম্পন্ন করিয়া ফিরিয়া আসিল।জাহাজ রওনা হইবে, গুরুদেব হঠাৎ আমার দিকে তাকাইয়া বলিলেন।
"আপনি কিছু খাইয়া আসিয়াছেন? "
আমি মাথা নাড়িয়া জানাইলাম,খাই নাই,তিনি তৎক্ষনাৎ আমাকে লইয়া তীরে নামিয়া আসিলেন।আমি বলিলাম, "জাহাজ ছাড়ে ছাড়ে, এখন আর খাবার দরকার নাই, ঢাকা যাইয়াই যাহা হয় কিছু খাওয়া যাইবে।এখন অপেক্ষা করিলে ও আমরা জাহাজ ফেল করিব।"
তিনি একটু হাসিয়া বলিলেন, "এখানে থাকাই যদি প্রাক্তনে থাকে তবে অবশ্যই থাকিতে হইবে। সবই গুরুর ইচ্ছা।"
আমাকে স্নান করিতে বলিয়া তিনি নিজেই একটা মাটির ভাণ্ডে চিড়া, চিনি,কলা ও মলাই কিনিয়া আনিলেন এবং নিজ হাতেই সমস্ত দ্রব্য একত্র করিয়া মাখিয়া রাখিলেন।স্নান করিয়া আমি খাইতে লাগিলাম।তিনি খাইবেন না তাহা ত জানিতাম।হঠাৎ জাহাজের সিটি পড়িল আর সঙ্গে সঙ্গে জাহাজ ছাড়িয়া দিল।আমি ত্রস্ত হইয়া বলিলাম, "এখন কি উপায় হইবে?
এই অপরিচিত স্থানে কোথায় যাইব,কাহার আশ্রয় লইব?"
তিনি অতি সহজভাবে নির্ব্বিকারে বলিলেন, "গুরু যাহা করেন তাহাই হইবে।"
জাহাজ ঘাট হইতে কতকদূর যাইয়া ফিরিয়া আসিল।আমরা সেই সুযোগে জাহাজে উঠিয়া পড়িলাম।পরে অনুসন্ধান করিয়া জানিলাম যে,কতকগুলি পাট ষ্টীমারে বোঝাই করা হইয়াছিল, কিন্তু চালানে ষ্টেশন মাষ্টারের নাম সহি না থাকায় ষ্টীমার ঘাটে ফিরিয়া আসিয়াছিল।সেই মৌলভীগণ বলিলেন, 'আপনাদের জন্যই জাহাজ ঘাটে ফিরিয়াছে, এ কেবল এই ঠাকুরেরই কারসাজি।"
শ্রীমৎ শ্যামদাদার আত্মকথা
শ্রীমহেন্দ্র চন্দ্র চক্রবর্ত্তী
শ্রীশ্রীরামঠাকুর
No comments: