“মা, এই যে নাম পাইলেন ইহার ভিতরে কিন্তু প্রাণ আছে।

   

🙏🙏🙏🙏🙏🙏

“মা, এই যে নাম পাইলেন ইহার ভিতরে কিন্তু প্রাণ আছে।

 🙏🙏🙏🙏🙏🙏



শ্রীশ্রীঠাকুর প্রদত্ত নাম

এখন যে প্রাণস্পর্শী উপদেশের কথা বর্ণনা করিতে যাইতেছিলাম, তাহারই একটি বিবরণ এখানে সন্নিবেশিত করিবার চেষ্টা করিব। ১৯৪৫ ইংরেজীর ২৮শে ডিসেম্বর তারিখে যে গুরুভগিনীটি ঠাকুরের কৃপা লাভ করিয়াছিলেন, তিনি তাহার স্বামীর সহিত আগরতলা হইতে ডাউন ট্রেনে রাত্রি ৭ ঘটিকার সময় চৌমুহনী আসিয়া পৌছেন এবং স্টেশনে নামিয়াই অন্যান্য দর্শনার্থীদের সহিত আশ্রমে চলিয়া আসেন।
তাহারা শ্রীশ্রী ঠাকুর কে প্রনাম করিয়া কিছুক্ষণ পর সুযোগ বুঝিয়া স্বামী – স্ত্রী দুজনে উঠিয়া আসিয়া ঠাকুরের আসনের কাছে হাত জোড় করিয়া দাড়ান। উক্ত মহিলার স্বামী ইতিপূর্বেই ঠাকুরের আশ্রয় লাভ করিয়াছিলেন। তাই তিনি তাহার স্ত্রীকেও নাম দিবার জন্য ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা জানান। ঠাকুর তখন মহিলাটিকে সম্বোধন করিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন “মা, নাম নিবেন?” তিনি মাথা নাড়িয়া সন্মতি জানাইলে ঠাকুর বলিলেন, আমি ‘নাম’ বলিয়া যাইতেছি, আপনি আমার সাথে সাথে ঐ নাম আবৃত্তি করিয়া যাইবেন।
এই বলিয়া শ্রীশ্রী ঠাকুর চক্ষু মুদ্রিত করিলেন এবং অল্পক্ষণ পরে ছয় অক্ষর যুক্ত নাম মহামন্ত্র উচ্চারণ করিতে লাগিলেন। মহিলাটিও ঠাকুরের নির্দ্দেশ অনুযায়ী ঐ নাম মহামন্ত্র আবৃত্তি করিয়া চলিলেন। এই ভাবে অষ্টাদশ বার আবৃত্তি করার পর ঠাকুর থামিয়া অতি আবেগভরে বলিতে লাগিলেন “মা, এই যে নাম পাইলেন ইহার ভিতরে কিন্তু প্রাণ আছে। আপনি ত সন্তানের মা। তাই জানেন যে সন্তান যখন ভূমিষ্ট হয়, তখন তাহার প্রাণের স্পন্দন বুঝা যায় না। ভূমিষ্ট হওয়ার পর ধাত্রী তাহাকে ধুইয়া মুছাইয়া শুকনা কাপড়ে জড়াইয়া নিয়া প্রাণ স্পন্দন দেয়। পরে সন্তান মুখব্যাদান করিলে অতি সন্তর্পণে ভিজা নেকড়ার সাহায্যে মিশ্রিত জল মুখে দেয়। আপনিও তাহার মুখে স্তন হইতে ক্ষীরধারা দেন। এভাবে যত্ন করিতে করিতে শিশু ক্রমে চোখ মেলে, হাত পা নাড়ে, তাহার মুখে হাসি ফোটে। ভূমিষ্ট হওয়ার সময় হইতে মা, শিশুকে যে ভাবে যত্ন করেন, তাহা মন দিয়া করেন না, করেন প্রাণ দিয়া। শিশুর প্রতি মায়ের এই যে টানে যত্ন, সেরূপ যত্ন এই নামের প্রতিও প্রাণ দিয়া করিতে হইবে।
কিছুদিন পর আপনি অতুড় ঘর ছাড়িয়া নিজের ঘর সংসারের কাজে যোগ দেন, সংসারের কাজে যাবার আগে শিশুকে অতি যত্ন ও সাবধানে শোয়াইয়া রাখিয়া যান। এদিকে সংসারের কাজকর্ম করিতে করিতে আপনি কিন্তু সব সময়েই উত্কর্ণ হইয়া থাকেন – কখন বুঝি বা শিশু কাঁদে, এই যে উত্কর্ণ হইয়া থাকা, এখানেও প্রানের টান। ঠিক এইভাবে যখন আপনি সংসারের কাজকর্ম নিয়া থাকিবেন, নামের প্রতিও ঠিক একইভাবে আপনার প্রাণের টান থাকিবে। মনে রাখিবেন এই সংসার গোপালের সংসার, যা কিছু সংসারের কাজ সবই গোপালের কাজ।
গোপাল ক্রমে হাঁটিতে শিখিলে যশোদা মা হাততালি দিয়া তাকে আঙ্গিনায় নাচাতেন এবং গোপালের নাচ দেখিয়া মা আনন্দে ভরপুর হইতেন। এই নামরূপী গোপালও আপনার যত্নে ক্রমে চেতনামুক্ত ও শক্তিশালী হইয়া আপনার হৃদয় আঙ্গিনা আলো করিয়া নাচিতেছেন, অনুভূতিতে জানিতে পারিবেন এবং যশোদা মায়ের ন্যায় আপনিও সেই অনুভূতিতে আনন্দে আত্মহারা হইবেন। ইহাই নিত্যানন্দের যোগ।
যশোদা মার ‘গোপাল’ ইতক্রমে বড় হইয়া মথুরার রাজা হইয়াছিলেন। তখন তাহার নাম হইয়াছিল ‘গোবিন্দ’।
আপনার নামরূপী গোপালকে প্রাণ দিয়া যত্ন করিতে করিতে ক্রমে গোবিন্দ রূপে, – বিশ্বের রাজা রূপে জানিতে পাইবেন। গো-ব্রহ্ম সত্য। বিদ্-জানা। গোবিন্দ-আনন্দ, সত্যকে জানা।”
শ্রীশ্রী ঠাকুর যেরূপ আবেগের সহিত কথাগুলি বলিয়া গেলেন, তাহাতে নামপ্রাপ্তা গুরুভগিনীটির প্রাণে এমনই সাড়া আসিল যে, তিনি আর অশ্রু সম্বরণ করিতে পারিলেন না। দর্দর্ করিয়া প্রেমাশ্রু তাহার গন্ডদ্বয় বহিয়া ঝরিতে লাগিল। শুধু তিনি নন, সেদিন এই নাম দিবার সময়ে ঠাকুরের আসনের সন্নিকটে আমরা যে কয়েকজন উপবিস্ট ছিলাম, কেহই অশ্রু সম্বরণ করিতে পারি নাই। ধন্য আমার এই ভাগ্যবতী গুরুভগিনী। ঠাকুরের কৃপায় ইস্টস্মৃতিতে ক্ষনিকের মধে সচ্চিনানন্দ সাগরে ডুবিয়া ধন্য হইলেন। এই ইস্টস্মৃতি তাহার হৃদযে চিরদিন জাগরুক থাকিবে, আমার এই আন্তরিক বিশ্বাস। দুঃখের বিষয় উক্ত নামপ্রাপ্তা গুরুভগিনীটির নাম জিজ্ঞাসা করার কথা তখন মনে জাগে নাই, তাই এখানে তাহার ও তাহার স্বামীর নাম উল্লেখ করিতে পারিলাম না।
শ্রীঁব্রজেন্দ্র কুমার চৌধুরী



No photo description available.
All reactions:
629

.............................................................................. Pls visit kid educational video
“মা, এই যে নাম পাইলেন ইহার ভিতরে কিন্তু প্রাণ আছে। “মা, এই যে নাম পাইলেন ইহার ভিতরে কিন্তু প্রাণ আছে। Reviewed by srisriramthakurfbpage on April 10, 2024 Rating: 5

No comments:

শ্রী শ্রী রামঠাকুরেরস্বহস্ত লিখিত পত্রাংশ -দ্বিতীয় খন্ড-223

Powered by Blogger.