প্রসাদে কোন দোষ থাকে নাঃ

 প্রসাদে কোন দোষ থাকে নাঃ



সেদিন একটু বেশি রাতেই শরৎচন্দ্র স্বগৃহে ফিরে যেতে পেরেছিলেন। পরদিন থেকে কোনও দিন প্রভাতে, কোনও দিন মধ্যাহ্নে, কোনও দিন বা সন্ধ্যায় শরৎচন্দ্র ঠাকুর সন্দর্শনে আসতেন।
একদিন ডা.দাশগুপ্ত দলে দলে নরনারীকে বারে বারে পাঠাচ্ছেন প্রসাদ পাওয়ার জন্য।রাত ন'টা বেজে গেছে অথচ শরৎবাবুর প্রসাদ পাওয়ার ডাক পড়ল না।
পরের বার ডা. দাশগুপ্ত যখন পুনরায় অনেককে ডেকে নিচ্ছেন প্রসাদ পাওয়ার জন্য তখন শরৎচন্দ্রও তাদের পিছন পিছন চলছিলেন।
পিছন থেকে ডা. দাশগুপ্ত জড়িয়ে ধরলেন শরৎচন্দ্রকে আর বললেন, "দাদা, আজ যা প্রসাদ হয়েছে তা আপনার পেটের পক্ষে মোটেই উপকারী নয়। রাতও অনেক হয়েছে, আপনাকে এবার বাড়ি যেতে হবে।"
শরৎচন্দ্রও নাছোড়বান্দা, বললেন, "না, সকলে প্রসাদ পাচ্ছেন, আমি কেন প্রসাদ পাব না?" ডা. দাশগুপ্ত দেখছেন চিকিৎসকের দৃষ্টিতে। তাই তিনি শরৎচন্দ্রকে প্রসাদে প্রতিনিবৃত্ত করার প্রয়াস পাচ্ছেন। আর শরৎচন্দ্র ভক্তের দৃষ্টিতে প্রসাদ প্রাপ্তির জন্য ব্যাকুল। দু'জনের তর্কাতর্কি চলছিল বারান্দার মাঝখানে, সেখানে তখন আর দ্বিতীয় কেউ ছিলেন না।
সহসা ঠাকুরমহাশয় এসে উপস্থিত হলেন। জানতে চাইলেন কী নিয়ে উভয়ের এতক্ষণ বাকযুদ্ধ। উত্তরে ডা. দাশগুপ্ত তার কথা বললেন, শরৎচন্দ্রও শোনালেন তার বক্তব্য।
ঠাকুরমহাশয় বললেন, "বৈষ্ণবঠাকুরকে প্রসাদে কেন বঞ্চনা করবেন, উনি তো উপকরণ খাইবেন না-প্রসাদ পাইবেন। প্রসাদে তো কোনও দোষ থাকে না। আর যদি ওনার পেটের ব্যামো হয়, আপনি তো বড় চিকিৎসক আছেনই-ওনারে দেখবেন।" মহোল্লাসে শরৎচন্দ্র প্রসাদ পেতে চলে গেলেন।
বাড়ি যাওয়ার সময় ডা. দাশগুপ্তের কাঁধে হাত দিয়ে শরৎচন্দ্র বললেন, "বড় ভাল প্রসাদ হয়েছে। আকন্ঠ খেয়েছি। কিছু ভাববেন না ডা. দাশগুপ্ত। সুস্থ শরীরে কাল সকালেও হাজির হতে পারব আপনার সামনে, এ আমার নিশ্চিত বিশ্বাস।"
পরের দিন প্রত্যুষে শরৎচন্দ্র উপস্থিত হয়েছিলেন তার কথামত। এর পরের দিন দশটা নাগাদ ঠাকুরমহাশয় 'শ্রীরাম-নিবাস' ছেড়ে অন্যত্র চলে গেলেন।
মাসখানেক পরে শরৎচন্দ্রের সামান্য অসুস্থতার সংবাদ পেয়ে ডা. দাশগুপ্ত তার বাসভবনে এলেন।
ওষুধপত্র সেবনের পর শরৎচন্দ্র যখন সম্পুর্ন সুস্থ, ডা. দাশগুপ্তকে একদিন বললেন, "ঠাকুরমহাশয় আবার কবে আসবেন? এলে আমি যেন খবর পাই একটু, এই আমার অনুরোধ।"
সানন্দে সম্মতি দিয়ে ডা. দাশগুপ্ত জিজ্ঞেস করলেন, ''ঠাকুরকে কেমন লাগল আপনার শরৎদা, জানতে ইচ্ছে করে।"
বিছানার উপর বসেছিলেন শরৎচন্দ্র, উদাস কন্ঠে বললেন, "তাঁর কাছে যখনই থেকেছি, মনে হয়েছে সব পেয়েছির দেশে বাস করছি। দূরে গেলে সে সুর হারিয়ে ফেলি। হারানো সে সুর আর খুঁজে পাই না।" একটু স্তব্ধ থেকে শরৎচন্দ্র বললেন, "তাই তো আবার তাঁকে দেখতে চাই।"
প্রসাদে কোন দোষ থাকে নাঃ প্রসাদে কোন দোষ থাকে নাঃ Reviewed by srisriramthakurfbpage on April 04, 2024 Rating: 5

No comments:

শ্রী শ্রী রামঠাকুরেরস্বহস্ত লিখিত পত্রাংশ -দ্বিতীয় খন্ড-223

Powered by Blogger.