শ্রী শ্রী রামঠাকুরের নামের অপূর্ব তাৎপর্যIশ্রী শ্রী রামঠাকুরের উপদেশ ও সাধনার মাধুর্য"

 গোপাল থেকে গোবিন্দ – ভক্তির সাধনার এক অপূর্ব যাত্রা।

জগতের প্রতিটি নামের মধ্যে লুকিয়ে আছে এক গভীর তাৎপর্য। কিন্তু শ্রী শ্রী ঠাকুরের দেওয়া ’ নাম কেবলমাত্র একটি নাম নয়; এটি এক অতুলনীয় সাধনার পথ।

এই নাম কেন বিশেষ? ঠাকুর নিজেই বলেছিলেন, এই নামের মধ্যে প্রাণ আছে। আজ আমরা জানবো ‘গোপাল’ থেকে ‘গোবিন্দে’ উত্তরণের এই পথে ঠাকুরের অপূর্ব শিক্ষা এবং ভক্তির মাধুর্য।

গোপাল বোঝায় ঈশ্বরের শিশুরূপ, যাকে স্নেহ আর মায়ায় পূর্ণ ভালোবাসা দিয়ে লালন করতে হয়। আর গোবিন্দ হলেন সেই ঈশ্বরের পূর্ণতা, যার মধ্যে আছে পরম আনন্দ ও সার্বভৌমত্ব।

শ্রী শ্রী ঠাকুরের দেওয়া এই নাম কেবল একটি ডাক নয়, এটি জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে ঈশ্বরের প্রতি সজাগ থাকার এক আধ্যাত্মিক উপায়। শ্রী শ্রী রামঠাকুর বলেছেন, যে কোনো নামই তখনই শক্তি পায় যখন সেই নামের প্রতি থাকে প্রাণের টান, মা যেভাবে সন্তানের প্রতি অনুভব করেন। আজ আমরা জানবো ‘’ নামের গভীর তাৎপর্য ও ঠাকুরের উপদেশ। এই নাম কেবল এক ডাক নয়, এটি এক সম্পূর্ণ সাধনার পথ।"আসুন, এই নামের মাধুর্য ও তাৎপর্য বুঝে নেওয়ার যাত্রায় যোগ দেয়া যাক ।"আমাদের সঙ্গে থাকুন, শ্রী শ্রী ঠাকুরের এই অমূল্য উপদেশে ভক্তির গভীরতায় ডুব দিতে বিশেষ অনুরোধ রইলো ।

জয়রাম ,জয়গোবিন্দ গুরুদেবের শ্রী চরণ কমলে শতকোটি প্রণাম জানিয়ে আজকের কথা শুরু করছি। 

শ্রী শ্রী ঠাকুর "গোপাল গোবিন্দ " নামের তাৎপর্য কোন এক নাম প্রার্থীনী ভদ্রমহিলাকে নাম দেয়ার পর অপূর্ব আবেগ ও মাধূর্য মিশিয়ে নামটির ব্যাখ্যা করেছিলেন এইভাবে -- "মা, এই যে নাম পাইলেন, ইহার ভিতর কিন্তু প্রাণ আছে। আপনি ত সন্তানের মা। তাই জানেন যে সন্তান যখন ভূমিষ্ঠ হয়, তখন তাহার প্রাণের স্পন্দন বুঝা যায় না। ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর ধাত্রী তাহাকে ধুইয়া মুছাইয়া শুকনা কাপড়ে জড়াইয়া নিয়া প্রাণ স্পন্দন দেয়। পরে সন্তান মুখ ব্যাদান করিলে অতি সন্তর্পণে ভিজা নেকড়ার সাহায্যে মিশ্রির জল মুখে দেয়।আপনিও তাহার মুখে স্তন হইতে ক্ষীরধারা দেন।

এভাবে যত্ন করিতে করিতে শিশু ক্রমে চোখ মেলে, হাত পা নাড়ে,তাহার মুখে হাসি ফোটে।ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় হইতে মা শিশুকে যে যত্ন করেন, তাহা ত মন দিয়া করেন না, করেন প্রাণ দিয়া।শিশুর প্রতি মায়ের এই যে প্রাণের টানে যত্ন, সেইরূপ যত্ন এই নামের প্রতিও প্রাণ দিয়া করিতে হইবে। কিছুদিন পরে আপনি আঁতুড় ঘর ছাড়িয়া নিজের ঘর সংসারের কাজে যোগ দেন।সংসারে কাজে যাবার আগে শিশুকে অতি যত্নে ও সাবধানে শোয়াইয়া রাখিয়া যান।

এদিকে সংসারের কাজকর্ম করিতে করিতে আপনি কিন্তু সব সময় উৎকর্ণ হইয়া থাকেন কখন বুঝি বা শিশু কাঁদে। এই যে উৎকর্ণ হইয়া থাকা এখানেও প্রাণের টানে।ঠিক এইভাবে আপনি সংসারের কাজকর্ম নিয়া থাকিবেন, নামের প্রতিও ঠিক একই ভাবে আপনার প্রাণের টান থাকিবে। মনে রাখিবেন এই সংসার গোপালের সংসার, যা কিছু সংসারের কাজ সবই গোপালের কাজ। 

গোপাল ক্রমে হাঁটিতে শিখিলে যশোদা মা হাত তালি দিয়া তাকে আঙ্গিনায় নাচাইতেন এবং গোপালের নাচ দেখিয়া মা আনন্দে ভরপুর হইতেন।এই নামরূপী গোপালও আপনার হৃদয় আঙ্গিনা আলো করিয়া নাচিতেছেন, অনুভূতিতে জানিতে পারিবেন এবং যশোদা মায়ের ন্যায় আপনিও সেই অনুভূতিতে আনন্দে আত্মহারা হইবেন।ইহাই নিত্যানন্দের যোগ। যশোদা মায়ের গোপালই ত ক্রমে বড় হইয়া মথুরার রাজা হইয়াছিলেন। 

তখন তাহার নাম হইয়াছিল গোবিন্দ। আপনার নামরূপী গোপাল কে প্রাণ যত্ন করিতে করিতে ক্রমে গোবিন্দরূপে - বিশ্বের রাজারূপে জানিতে পারিবেন। গো--ব্রহ্ম, সত্য। বিদ-- জানা। গোবিন্দ -আনন্দ। শ্রী শ্রী ঠাকুর তার আশ্রিতজনকে "গোপাল গোবিন্দ " নাম করতে বলেছেন- "গোবিন্দ গোপাল "বলেননি। এই নামের মাধ্যমে শ্রী শ্রী রাম ঠাকুর সাধন ক্রমটি রেখেছেন।গোপাল থেকেগোবিন্দে উত্তরণ--- বাৎসল্যরসে গোপাল ভজন থেকে মধুর রসে গোবিন্দ নামে উত্তরণ হয়।

" জয় রাম জয় গোবিন্দ 🙏🙏


শ্রী শ্রী ঠাকুরের এই অপূর্ব নাম ব্যাখ্যা ও উপদেশ মানবজীবনের আধ্যাত্মিক পথচলায় গভীর অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে। তিনি যে কেবল নাম দেন তা নয়, সেই নামের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য এবং তার চর্চার প্রয়োজনীয়তাও ব্যাখ্যা করেন।


1. গোপাল নামের তাৎপর্য:

  • গোপাল শব্দটি বোঝায় ভক্তের অন্তরে ভগবানের শিশুরূপ। এটি ঈশ্বরের প্রতি মাতৃত্বের বাৎসল্য রসের প্রতীক।
  • শ্রী শ্রী ঠাকুর বলেছিলেন, "এই নামের মধ্যে প্রাণ আছে। আপনি সন্তানের মা, তাই জানেন যত্ন কীভাবে করতে হয়।"
  • যেমন একটি শিশু জন্মের পরে যত্ন পায় এবং ধীরে ধীরে প্রাণের স্পন্দন প্রকাশ করে, তেমনই নামের প্রতি যত্ন নিলে সেই নামের শক্তি ভক্তের অন্তরে প্রকাশিত হয়।

গোপাল হলেন শিশুরূপী ভগবান, যেখানে ভক্তের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক মাতৃত্বের বাৎসল্য রসের। আর গোবিন্দ হলেন সেই পরিণত, রাজাধিরাজ ভগবান, যেখানে ভক্ত মধুর রসের মাধ্যমে তাঁকে জানেন।

শ্রী শ্রী ঠাকুর বলেছেন যে নামরূপী গোপালের প্রতিও একজন মা যেমন প্রাণ দিয়ে যত্ন করেন, তেমন করে যত্ন করতে হবে। এই যত্ন ও প্রাণের টান ভক্তের মনে ঈশ্বরের প্রতি নিরন্তর অনুভূতি ও সজাগতা সৃষ্টি করে। সংসারের কাজেও এই অনুভূতি থাকা উচিত, কারণ "এই সংসার গোপালের সংসার।"

গোপাল থেকে গোবিন্দে উত্তরণ:নামের যত্ন ও সাধনা:

  • মা যেমন তার সন্তানকে শুধু মন দিয়ে নয়, প্রাণ দিয়ে যত্ন করেন, তেমনই ভক্তকেও তার নামের প্রতি একই রকম যত্নবান হতে হবে।
  • গৃহকর্মের মাঝেও মা সন্তানের প্রতি সজাগ থাকেন। ঠাকুর বলেছিলেন, "সংসারের প্রতিটি কাজ গোপালের কাজ, তাই কাজের মধ্যেও নামস্মরণ চালিয়ে যেতে হবে।"

গোপাল ভক্তের অন্তরে ছোট্ট শিশুর মতো থাকেন, যাকে স্নেহ ও মমতা দিয়ে লালন করতে হয়। কিন্তু সেই শিশুর যত্ন ও চর্চার মাধ্যমে একসময় তিনি পরিপূর্ণ গোবিন্দরূপে প্রকাশিত হন। এটি সাধনার এক ধাপ থেকে আরেক ধাপে উত্তরণের প্রতীক— ব্রহ্মসত্যের সন্ধানে জ্ঞান ও অনুভূতির একত্রীকরণ।

নামের গভীরতা ও সাধনপ্রক্রিয়া:গোপাল থেকে গোবিন্দে উত্তরণ:

  • গোপাল ভক্তের হৃদয়ে বাচ্চার মতো খেলে বেড়ান। তবে সাধনার মাধ্যমে সেই গোপাল একসময় গোবিন্দরূপে প্রকাশ পান, যিনি বিশ্বের রাজা।
  • এই উত্তরণ ভক্তির বাৎসল্য রস থেকে মধুর রসের দিকে।
  • গোবিন্দ নামের অর্থ: "গো" মানে ব্রহ্ম, "বিদ" মানে জানা। তাই গোবিন্দ বোঝায় আনন্দের মাধ্যমে জ্ঞানের অনুভূতি।

"গো" মানে ব্রহ্ম বা সত্য, আর "বিদ" মানে জানা। "গোবিন্দ" শব্দের অর্থ আনন্দের মাধ্যমে সত্যকে জানা। ঠাকুর এখানে ভক্তিকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান, যেখানে গোপালের বাৎসল্য রস থেকে গোবিন্দের মধুর রসে উত্তরণ ঘটে।

এই নাম চর্চার মাধ্যমে ভক্ত অনুভব করেন গোপালের নৃত্য, যা তাঁর হৃদয়াঙ্গনে চিরআনন্দের সৃষ্টি করে। এর মাধ্যমে তিনি "নিত্যানন্দের যোগ" লাভ করেন, যা শেষমেশ তাঁকে বিশ্বজনীন প্রেম ও ঈশ্বরের পরম উপলব্ধির দিকে নিয়ে যায়।

ঠাকুরের উপদেশ:সাধনার ফলাফল:

  • গোপাল থেকে গোবিন্দে উত্তরণের অর্থ হলো ভক্ত নিজেই প্রভুর বিশ্বজনীন রূপ উপলব্ধি করতে পারবেন।
  • সংসারের কাজকে গোপালের কাজ মনে করলে, সেই কাজও সাধনার অংশ হয়ে যায়।
  • শ্রী শ্রী ঠাকুর ‘গোপাল গোবিন্দ’ নাম দিয়েছেন কারণ এটি ভক্তিকে একটি পর্যায় থেকে আরেকটি পর্যায়ে নিয়ে যায়।
  • ঠাকুর বলেছিলেন, "এই নাম চর্চার মাধ্যমে ভক্ত তার হৃদয়ের আঙ্গিনায় গোপালের নৃত্য অনুভব করবেন, যেমন যশোদা মা আনন্দ পেয়েছিলেন। এই আনন্দই নিত্যানন্দ।"

"এই " নামের মাধ্যমে ঠাকুর ভক্তের সাধনার ক্রম তুলে ধরেছেন—একটি নামের মধ্যে সন্তানতুল্য যত্নের শিক্ষা থেকে শুরু করে ঈশ্বরের সার্বভৌমত্ব উপলব্ধি পর্যন্ত। এই নাম ভক্তকে প্রাত্যহিক জীবনে ঈশ্বরের সঙ্গে যুক্ত থাকার সুযোগ দেয়।

জয় রাম জয় গোবিন্দ 🙏

এই নামের প্রতিটি স্তরে লুকিয়ে আছে আধ্যাত্মিক পথের গভীর অর্থ। গোপাল থেকে গোবিন্দ—এই উত্তরণের মধ্যেই রয়েছে ভক্তির পরম আনন্দ। শ্রী শ্রী ঠাকুরের উপদেশ আমাদের জীবনে পথপ্রদর্শক হয়ে থাকুক।"

জয় রাম, জয় গোপাল, জয় গোবিন্দ।"
"শ্রী শ্রী রামঠাকুরের উপদেশে অনুপ্রাণিত হওয়ার বিশেষ অনুরোধ রইলো । ভিডিওটি ভালো লাগলে কৃপা করে লাইক ও শেয়ার করুন। শ্রী শ্রী রামঠাকুরের আরও উপদেশ জানতে কৃপা করে  আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।"

  • আপনার মতামত কমেন্টে জানান।
  • এই নামের চর্চার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন।
  • পরবর্তী ভিডিওর জন্য বিষয় প্রস্তাব করুন।
  • জয় রাম জয় গোবিন্দ 🙏

হে গুরুদেব 

শ্রী শ্রী রামঠাকুরের নামের অপূর্ব তাৎপর্যIশ্রী শ্রী রামঠাকুরের উপদেশ ও সাধনার মাধুর্য" শ্রী শ্রী রামঠাকুরের নামের অপূর্ব তাৎপর্যIশ্রী শ্রী রামঠাকুরের উপদেশ ও সাধনার মাধুর্য" Reviewed by শ্রী শ্রী সত্যনারায়ণ নমঃ(SriSriramthakur O gan Ganer vhovon Youtube channel) on November 24, 2024 Rating: 5

No comments:

শ্রী শ্রী রামঠাকুরেরস্বহস্ত লিখিত পত্রাংশ -দ্বিতীয় খন্ড-223

Powered by Blogger.