শ্রীঠাকুর মশারির মধ্যে শূন্যে বসিয়া আছেন ।
জয় গুরু <> জয় রাম <> জয় গোবিন্দ ।
~~ শুভ সকাল ~~
পিতৃশ্রাদ্ধ সমাপন হইলে তিনি মাতার ভরণপোষণের নিমিত্ত অর্থান্বেষণে বাহির হইলেন ।
বয়স তখন ২০/২১ বৎসর মাত্র ।
নোয়াখালী আসিয়া সিভিল কোর্টের নাজির সদানন্দ গঙ্গোপাধ্যায়ের গৃহে মাসিক পাঁচ টাকা বেতনে রন্ধনকার্য্যে নিযুক্ত হন ।
নোয়াখালীতে শ্রীঠাকুর প্রথমে এই নাজিরবাবুর নিকটেই প্রকাশিত হন ।
শ্রীঠাকুর নিয়মিত ভাবে রন্ধনকার্য্য করিতেন ,
কিন্তু কোনদিনও নিজে কিছু আহার করিতেন না ।
নিজের ভাগের ভাত-তরকারি কুকুর ,
বিড়াল প্রভৃতি জন্তুদের খাওয়াতেন ।
এই বিষয় একমাএ বাড়ির ভৃত্য ছাড়া অন্য কেহই
জানিতেন না ।
একদিন রাত্রিতে শ্রীঠাকুরের শয়নঘরে ভৃত্যটি প্রবেশ
করিয়া দেখিতে পায় ,
শ্রীঠাকুর মশারির মধ্যে শূন্যে বসিয়া আছেন ।
ভৃত্যটি ভয়ে চিৎকার করিয়া উঠিলে সদানন্দবাবু
বাহিরে আসিলেন ।
সদানন্দবাবুকে দেখিয়া সে বলিল ,
ঐ ভূতুড়ে ঠাকুর মশারির মধ্যে ঝুলিতেছে ।
সদানন্দবাবু সেই ঘরে প্রবেশ করিয়া দেখিলেন ,
শ্রীঠাকুর মশারির ভিতরে অকাতরে ঘুমাইতেছেন ।
ভৃত্যটি যখন বুঝিল সদানন্দবাবু তাহার কথা বিশ্বাস
করিতেছেন না ,
তখন সে বার বার বলিতে লাগিল ,
সত্যই এই ঠাকুর মশারির মধ্যে শূন্যে ঝুলিতে ছিল ।
আর এই ঠাকুর কোন দিনও কিছু খায় না ,
তাঁহার আহার্য্য কুকুর , বিড়াল ও গরুকে খাওয়ায় ।
ভৃত্যের এই সব কথা বিশ্বাস না করিলেও সদানন্দবাবুর
মনে সন্দেহের উদ্রেক হইল ।
পরদিন রাত্রিতে শ্রীঠাকুরের আহারের প্রতি তিনি
লক্ষ্য রাখিলেন ।
শ্রীঠাকুর সবার আহারের পরে ভৃত্যকে ভাত-তরকারি
দিয়া একটি থালায় কিছু ভাত-তরকারি লইয়া জঙ্গলের
দিকে চলিলেন ।
সদানন্দবাবু শ্রীঠাকুরের পশ্চাৎ্ পশ্চাৎ গিয়া দেখিলেন যে , একটি কৃষ্ণকায় গাভী আসিয়া থালা হইতে ভাত-তরকারি
খাইতে আরম্ভ করিল ।
শ্রীঠাকুরের এই কার্য্য দেখিয়া সদানন্দবাবু আশ্চর্যান্বিত
হইয়া গরুটির খাওয়া শেষ না হওয়া পর্য্যন্ত চুপ করিয়া
দাঁড়াইয়া ছিলেন ।
শ্রীঠাকুর শূন্য থালা হাতে ফিরিলে সদানন্দবাবু জিজ্ঞাসা করিলেন ,
নিজে না খাইয়া ঐ গাভীটিকে খাওয়াইলেন ?
শ্রীঠাকুর বলিলেন ,
আমার খাওয়ার প্রয়োজন হয় না ।
সদানন্দবাবু বলিলেন ,
আমার ভাত নষ্ট করেন কেন ?
শ্রীঠাকুর বলিলেন ,
আমি খাইলেও তো আপনার চাউল খরচ হইত ,
তাই আমি না খাইয়া গরুটিকে খাওয়াইলাম ,
ইহাতে আপনার কোন ক্ষতি হয় নাই ।
সদানন্দবাবু শ্রীঠাকুরকে জিজ্ঞাসা করিলেন ,
আহারের যদি আপনার প্রয়োজন না থাকে তবে আপনি
চাকুরী কেন করেন ?
শ্রীঠাকুর বলিলেন ,
চাকুরী করি আমার মাতার ভরণপোষণের জন্য ।
সদানন্দবাবু বলিলেন ,
ঠাকুর , আপনার আর চাকুরীর প্রয়োজন নাই ।
আপনি এখানে ইচ্ছা চলিয়া যান ।
আমি যত দিন বাঁচিয়া থাকিব প্রতি মাসে আপনার মাতাকে পাঁচটি করিয়া টাকা পাঠাইব ।
আপনি শুধু আমাকে মনে রাখিবেন ।
:----রোহীনী কুমার মজুমদার
" শ্রীগুরু শ্রীশ্রীরাম ঠাকুর "
পৃষ্ঠা সংখ্যা ১৩৮ হইতে ।
All reactions:
441
No comments: