শ্রীঠাকুরের বাস্তবিক কি প্রয়োজন, তাহা তিনি কখনো প্রকাশ করতেন না........

 


শ্রীঠাকুরের বাস্তবিক কি প্রয়োজন, তাহা তিনি কখনো প্রকাশ করতেন না...............
💥💥
১৯২৭ সনের কথা। তখন মাঝে মাঝে শ্রীশ্রীঠাকুর ঢাকার কোন কোন ভক্তের গৃহে আসতেন। অবশ্য তখন ঢাকায় ঠাকুরের ভক্তের সংখ্যা পাঁচ ছ' জনের বেশী ছিলেন না। এঁদের মধ্যে স্বর্গীয় বীরেন্দ্র মজুমদার ছিলেন প্রাচীনতম। তখন বীরেন বাবু এবং শ্রীহরিদাস আচার্যের গৃহে গিয়েই কেহ কেহ শ্রীশ্রীঠাকুরকে দর্শন করতেন। এরপর থেকে ঢাকায় ঠাকুরের ভক্ত সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং ঠাকুরও মাঝে মাঝে ঢাকায় আসতেন।
সময়ে অসময়ে সহসা শ্রীশ্রীঠাকুর ভক্তগৃহে পদার্পণ করতেন। তাঁহার পরনে থাকত আধময়লা কাপড় এবং গায়ে খদ্দরের নিমা বা একখানা সাধারণ চাদর। কখনো আবার নিমাটিও গায়ে থাকত না, শুধু একখানা চাদর গায়ে এসে উপস্থিত হতেন। হয়ত কোন দূর অঞ্চল ঘুরে ধূলি ধূসরিত নগ্ন চরণে এসে দেখা দিতেন। কিন্তু কোথা থেকে কি অবস্থায় এলেন, সে কথা কখনো বলতেন না এমন কি শারীরিক ক্লেশ, সুবিধা-অসুবিধা, ক্ষুধা তৃষ্ণার কোন কথা বলারই অভ্যাস ছিল না। ভক্তগৃহের লোকেরা বাতাস করতেন, পা ধুইয়ে দিতেন এবং অনতিবিলম্বে কিছু ফলমূল আহারের ব্যবস্থা করতেন। ঠাকুরের তখন বাস্তবিক কি প্রয়োজন, তাহা তিনি কখনো প্রকাশ করতেন না।
নগ্ন গায়ে ঠাকুরকে দেখা যেত না। গায়ে কিছু না কিছু আবরণ থাকতই। দ্বিতীয় কোন পরিধেয় বা জামা চাদর তাঁহার সঙ্গে দেখা যায়নি। ঠাকুর এক-কাপড়েই চলাফেরা করতেন। কখনো ঠাকুরকে স্নান করতে দেখা যায়নি; কাজেই কাপড় বদলানোর বালাই তাঁর ছিল না। যদি ধোয়া একখানা কাপড় পরতে দিয়ে, ঠাকুরের ময়লা কাপড়খানা ধুইয়ে দেবার ব্যবস্থা করা হত, তবে কাপড়খানা শুকিয়ে গেলে আবার যত্ন করে তা' পরতেন, আর সাময়িকভাবে ব্যবহৃত কাপড়খানা ধীরে ধীরে সুন্দর করে গুছিয়ে রেখে যেতেন। সাধারণ ভাবেই মনে হতে পারে যে, দিনের পর দিন ব্যবহৃত কাপড়খানা নিশ্চয়ই যেমনি হত ময়লা, তেমনি হত দুর্গন্ধময়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা হতো না। ঠাকুরের পরিহিত কাপড় কখনো বিশ্রী নোংরা হত না; আর দুর্গন্ধ হওয়া দূরে থাকুক, বরং তাঁর পরনের কাপড় থেকে অতি মনোরম সৌরভ পাওয়া যেত।
কোন ভক্ত পরম আগ্রহে নূতন একখানা কাপড় দিয়ে উহা পরবার অনুরোধ জানালে ঠাকুর কাপড়খানা পরতেন এবং পুরনো কাপড়খানা সযত্নে ভাঁজ করে নিয়ে যেতেন। অনতিবিলম্বে হাতের কাপড় কোন ফাঁকে কা'কে দিয়ে দিতেন। সময়ে সময়ে ভক্তগণ ঠাকুরের পরবার জন্য নূতন কাপড় দিলে উহা তখনই না পরে হাতে তুলে নিয়ে যেতেন। বলা বাহুল্য যে তাঁর হাতে ঐ কাপড় আর বেশীক্ষণ থাকত না। রাস্তায় চলতে কা'কে কোন্ ফাঁকে দিয়ে দিতেন। অনেক সময় ভক্তগণ ঠাকুরকে গরম কাপড়ের নিমা এবং শীতের সময় গায়ে দেবার জন্য মূল্যবান আলোয়ান দিতেন। কিন্তু ঐ সব গরম জামা কাপড় কোথায় বিলিয়ে দিয়ে আবার সেই নিমা গায়েই ঠাকুর ফিরে আসতেন।
একবার জনৈক ভক্ত শ্রীশ্রীঠাকুরকে অতি সুন্দর একখানা গরদের চাদর দিয়েছিলেন। তাঁহার গায়ে ঐ চাদরখানা দেখে সবাই খুশী হয়েছিলেন। উহা ঠাকুরের গাযে বড় সুন্দর মানিয়েছিল। গায়ের রঙে আর চাদরের রঙে যেন মিশে গিয়েছিল। সেই সময়ে কোন মহিলা বলেছিলেন, গরদের চাদরখানায় আপনাকে বড় সুন্দর মানিয়েছে। এখানা ব্যবহার করুন, কাউকে দিয়ে দেবেন না। ঠাকুর তাঁহার স্বভাব সুলভ ভঙ্গীতে বললেন, 'হ'।
দু'দিন পরে আবার যখন ঠাকুর ফিরে এলেন, তখন দেখা গেল তাঁর গায়ে সেই নিত্যকার নিমাটি; গরদের চাদরখানা কোথায় যেন চলে গেছে। উপরোক্ত মহিলাটি ব্যগ্রভাবে জিজ্ঞাসা করলেন, 'সে গরদের চাদরখানা কোথায়'? ঠাকুর নির্বিকারভাবে উত্তর দিলেন, 'আছে' মহিলা সখেদে বললেন, 'আছে তো নিশ্চয়ই কারো কাছে।'
গুরু কৃপাহি কেবলম।
শ্রীশ্রীঠাকুর রামচন্দ্র দেব
শ্রীসুশীলচন্দ্র দত্ত।
জয় রাম জয় রাম জয় রাম
👏👏👏👏👏👏👏👏👏👏
শ্রীঠাকুরের বাস্তবিক কি প্রয়োজন, তাহা তিনি কখনো প্রকাশ করতেন না........ শ্রীঠাকুরের বাস্তবিক কি প্রয়োজন, তাহা তিনি কখনো প্রকাশ করতেন না........ Reviewed by শ্রী শ্রী সত্যনারায়ণ নমঃ(SriSriramthakur O gan Ganer vhovon Youtube channel) on May 07, 2025 Rating: 5

No comments:

শ্রী শ্রী রামঠাকুরেরস্বহস্ত লিখিত পত্রাংশ -দ্বিতীয় খন্ড-223

Powered by Blogger.