কলকাতার ভক্তগণকে শ্রীশ্রীঠাকুর একদিন কথাপ্রসঙ্গে বলেছিলেন, “আমি ঐখানেই থাকুম।" অর্থাৎ শ্রীশ্রীঠাকুর চিত্রপটে শ্রীশ্রীসত্যনারায়ণরূপে যাদবপুর শ্রীশ্রীকৈবল্যধামের পীঠস্থানে চির বিরাজিত থেকে মানবের জাগতিক কামনা- বাসনা পূর্ণ করে উদ্ধার করে থাকেন।
পরম গুরু শ্রীশ্রীরামঠাকুর স্বয়ং ব্যক্ত করেছেন যে, “মোহন্ত মহারাজ কৈবলানাথের স্বরূপ...এই মোহন্ত মহারাজই কৈবলানাথের সৰ্ব্বসকুল্য কৰ্ত্তা হইয়াছেন।”
যখনই কোন মুশকিলে পড়ে ছুটে গিয়েছি তাঁর কাছে, তখনই তিনি সহজভাবে স্নেহের সঙ্গে সমস্যার সমাধান করে দিয়েছেন। জীবনে কোনদিনই তা আমরা ভুলতে পারব না। একটি ঘটনা এখানে উল্লেখ করলাম। খুব সম্ভব ১৯৮৪/৮৫ সালে টালিগঞ্জের কুদঘাটে শ্রীশ্রীঠাকুরের উৎসবে
আমরা গিয়েছিলাম একমাত্র কন্যা মামণিকে নিয়ে। সেখান থেকে আসার সময় কিছু প্রসাদ এনেছিলাম, বাড়িতে আমাদের একমাত্র ছেলে রাজা ছিল। এসে দেখি রাজা অঘোরে ঘুমুচ্ছে। ছেলেকে ঘুম থেকে তুলে নিয়ে অনেক কষ্ট করে বসিয়ে ঐ প্রসাদ খেতে দিয়েছিলাম। কয়েক গ্লাস প্রসাদ খাওয়ার পর হঠাৎ চেয়ারের মধ্যে রাজা ঢলে পড়ল এবং জ্ঞান হারাল। ঐ দেখে মামণি চেঁচিয়ে উঠল, “আমার দাদার কি হল?” সেই চিৎকার শুনে আমাদের পাড়া-প্রতিবেশীরা দৌড়ে এল। রাজার ঐ অবস্থা দেখে কেউ ডাক্তার ডাকতে গেল, কেউ ওকে চোখে-মুখে জল দিতে লাগল। আমাদের মনের অবস্থা তখন কিরকম ভাষায় তা বোঝাতে পারব না। বিশেষত, আমার মনে হতে লাগল যে, রাজা হয়তো আর চোখ খুলবে না বা জেগে উঠবে না। যাই হোক, শ্রীশ্রীঠাকুরের কৃপায় কিছুক্ষণ পরেই ওর জ্ঞান ফিরে এল। এরপর ডাক্তার এল কিন্তু পরীক্ষা করে কোন দোষ পেল না। আমরা সারারাত্রি চিন্তায় জেগেই ছিলাম। রাত্রি ৪টা বাজার সঙ্গে সঙ্গেই আমি উঠে যাদবপুর কৈবল্যধামে চলে এলাম। তখন আমাদের শ্রদ্ধেয় চতুর্থ মোহন্ত মহারাজ এখানে ছিলেন। প্রথমে সেখানে হারানীদির সঙ্গে দেখা হয়ে গেল এবং তিনি আমার কান্না ভরা মুখ দেখে আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন-
“তোর কি হয়েছে উমা, বল আমায়।” হারানীদি আমার কাছে সব শুনে বললেন—“তুই দাঁড়া, আমি দেখছি।” তারপরেই মহারাজ দরজা খুলে দিতে বললেন। আমার কান্নাকাটি দেখে মহারাজ বললেন, “কি হয়েছে মা উমা ? তুমি কেন কান্নাকাটি করছ?” তখন আমি প্রণাম করে তাকে গতকাল রাত্রির ঘটনা বিস্তারিত ভাবে ব্যক্ত করলাম এবং করজোড়ে আরও বললাম – “মহারাজ, আপনার ছেলেকে ছোটবেলায় শ্রীশ্রীঠাকুর রক্ষা করেছে, এবার আপনি আমার ছেলেকে রক্ষা করুন।" মহারাজ আমাকে আশ্বস্ত করলেন।
কতক্ষণ চুপচাপ থেকে মোহন্ত মহারাজ আমাকে বললেন, “তুমি মা পীঠস্থানে যাও। ওখানে প্রণাম করে শ্রীশ্রীসত্যনারায়ণের পীঠস্থান থেকে মৃত্তিকা নিয়ে যাও এবং রাজার সারা অঙ্গে মেখে দাও।” তখন আমি করজোড়ে বললাম, “মহারাজ আমি নিজে কিছু করতে পারব না—যা করার আপনাকেই করতে হবে।”
তখন কি ভেবে মহারাজ ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন এবং কিছুক্ষণ পরে এসে আমাকে বললেন, “এই নাও মা, যা দিলাম তা দিয়ে সারা অঙ্গে রাজাকে মাখিয়ে দাও—কোন চিন্তা করো না, শ্রীশ্রীঠাকুরের কৃপায় ভাল হয়ে যাবে।” তারপর, আমি মহারাজকে প্রণাম করে ছুটে বাড়িতে চলে এসে তাঁর
আশীর্বাণী মৃত্তিকা দিয়ে রাজার সর্বাঙ্গে লেপন করে দিলাম।
তারপর থেকে মহারাজের আশীর্বাদে আজ পর্যন্ত ঐ প্রকার ঘটনা আর ঘটে নি। আমরা সবাই মহারাজের কাছ থেকে এইরূপ বহু কৃপা ও ভালবাসা স্নেহ পেয়ে ধন্য হয়ে গিয়েছি। আমাদের স্থির বিশ্বাস যে, তিনি আমাদের ছেড়ে কোথাও যান নি তিনি তাঁর অপ্রাকৃত দেহ নিয়ে শ্রীশ্রীকৈবল্যনাথ স্বরূপ শ্রীশ্রীসত্যনারায়ণ পটেই চির প্রাণবন্ত হয়ে কৈবল্যধামে অবস্থান করছেন। আমাদের পুত্র রাজার এভাবে আরোগ্যের পর স্বভাবত আমাদের মনে প্রশ্ন জেগেছিল কৈবল্যধামের সব জায়গাই তো পবিত্রতার আধার। তবে মহারাজ কেন বিশেষভাবে পীঠস্থানের মৃত্তিকা দিয়ে রাজার সর্বাঙ্গে লেপন করার কথা বলেছিলেন।
কলকাতার ভক্তগণকে শ্রীশ্রীঠাকুর একদিন কথাপ্রসঙ্গে বলেছিলেন, “আমি ঐখানেই থাকুম।" অর্থাৎ শ্রীশ্রীঠাকুর চিত্রপটে শ্রীশ্রীসত্যনারায়ণরূপে যাদবপুর শ্রীশ্রীকৈবল্যধামের পীঠস্থানে চির বিরাজিত থেকে মানবের জাগতিক কামনা- বাসনা পূর্ণ করে উদ্ধার করে থাকেন। ঐ পীঠস্থানে সব দেবদেবীগণ নিত্য বিরাজ করেন। মহা পবিত্রস্থান ঐ পীঠস্থান। শ্রীশ্রীঠাকুরের অনন্ত করুণার দৃষ্টান্ত আমার পুত্রের রোগমুক্তি। জয় মোহস্ত মহরাজ! “জয় রাম শ্রীরাম জয় জয় রাম”।
“সত্য অপেক্ষা জগতে কি আছে? সত্য অনুশীলনে পরমানন্দময় নিত্য সেবার শক্তি পাইয়া পরম প্রীতি লাভ করিয়া থাকে, অহৈতুকী প্ৰেমে ভাসাইয়া ফেলে।”
No comments:
Post a Comment