শ্রীশ্রী সাত্যনারায়ান পাঁচালী।Sri Sri Satyanarayan Pachali.
শ্রীশ্রী ঠাকুরের শ্রী মুখে ব্যাখ্যা ,
শ্রীশ্রী সত্যনারায়ণ পূজার পূর্ব প্রস্তুতি এবং পূজা প্রণালীঃ
৩। শ্রীশ্রী ঠাকুর শ্রীমুখে বলেছেন ঘট স্থাপন করে আহ্বান করলে দায়িত্ব বেড়ে যায়।
৫। শ্রীশ্রী ঠাকুর বিগ্রহের বাম পাশে সুসজ্জিত তুলসীর বেদী স্থাপন করতে হয়।
৬। বিগ্রহের সম্মুখে ত্রিপদীর উপর তাম্রপত্র অথবা কাঁসপিতলের থালা দিতে হয়। থালার উপরে ফুল, বেলপাতা তুলসী নিবেদন করতে হয়।
৭। পূজকের সম্মুখে কোষাকুষী, ডানে পুষ্পপত্রে পূজার উপকরণ, বামে ঘন্টা, হস্ত প্রক্ষালনের এক ঘটি বা এক কমন্ডলী জল ও ডাবুর রাখতে হবে। হাত মোছার জন্য গামছা বা রুমাল রাখতে হবে। কোনও অবস্থায় সে রুমাল আরতির সময় ব্যবহার করা যাবে না।
৮। পঞ্চপীর বা পঞ্চগুরুর জন্য পাঁচটা আসন, পাঁচটা থালায় ভোগ, পাঁচটা জলপূর্ণ ঘটি, পাচটা জলপূর্ণ গ্লাস, ডাবুর, পাঁচ বাটি সির্ণি, মুখসুদ্ধি, খরিকা ও পাঁচ খিলি পান দিতে হয়। কোথায় পাঁচটার জায়গায় তিনটা আসন ব্যবহার করা হয়।
৯। তুলসীর সম্মুখে একটা ভোগ, আরেকটা থালায় ৯/১১ খানা কুচা নৈবদ্য দিতে হবে। কোথাও কোথাও নিয়মের ব্যতিক্রম পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। শ্রীশ্রীসত্যনারায়ণ পূজায় মোকাম সাজানোর তাৎপর্যঃ
ভগবান বা ইষ্টের ‘নাম' জপ, স্মরণ, মনন, কীর্তন ও ভক্তিই হল পুষ্পাঞ্জলী এই ধনু হ’ল প্রণবের প্রতীক।
খ) পাঁচখানা নিশান হ'ল- পঞ্চপ্রাণ যথা প্ৰাণ, অপাণ, সমান, উদান, ব্যান। গ) পাঁচবাটী সির্ণি— পঞ্চভূত ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ, ব্যোম, রূপ, রস, গন্ধ, স্পর্শ ও শব্দের মহামিলন।
ঘ) ছুরি বা অসি দিয়ে ষড়রিপু কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ, মাৎসর্যকে ভক্তিছেদন করবেন।
সির্ণি- আটা বা চালের গুড়া দুধ, চিনি, কলা ও নানা দ্রব্যের সংমিশ্রণ অর্থাৎ
উপাদেয় খাদ্য।
পূজোপচার- নিত্য পূজো পঞ্চোপচারে করলেই চলে। উৎসবাদী বিশেষ পূজার সময় সামর্থানুসারে দশোপচার, ষোড়শপচার অথবা অষ্টাদশোপচারে পূজা করতে হয়।
পূজোপকরণ- ফুল, বেলপাতা, দূর্ব্বা, তুলসী, অগুরো, চন্দন, ধূপ, ধুপকাঠি, তিল-হরিতকি, আতপ চাউল, দীপ ইত্যাদি।
সির্ণি তৈরীর নিয়ম- শ্রীশ্রীসত্যনারায়ণের সেবার সির্ণি আটা/ময়দা/আতপ চাউলের গুড়া যে কোনটির সঙ্গে দুধ, কলা, চিনি/গুড় ও ঘৃত দিয়ে তৈরি করা হয়। অঞ্চলভেদে সুস্বাদু বিভিন্ন ফলও মিশানো হয়। তবে শ্রীশ্রীঠাকুরের পূজায় চাঁপা কলা এবং বাতাসা না দেয়াই একান্তভাবে বাঞ্ছনীয়।
আরতির দ্রব্য- ধূপ, ধূপকাঠি, পঞ্চপ্রদীপ, কর্পূর, জলশঙ্খ, রুমাল, ফুলের তোড়া, পাখা বা চামড়।
আরতি নিয়ম- প্রত্যেক আরতির সময় দেবতা পদতলে চারবার, নাভী দেশে দু বার, মুখে তিনবার ও সর্ব্বাঙ্গে সাতবার আরতি করতে হবে। ঐ সময় শ্রীগুরুর বিগ্রহ কল্পনা করতে হবে।
১। পঞ্চোপচারে (যথা:- গন্ধ, পুষ্প, ধূপ, দীপ ও নৈবদ্য) পূজা করা যেতে পারে।
২। গন্ধ হিসেবে চন্দন ব্যবহার করা যায়। শ্বেত চন্দন হলে ভালো হয়। সামথ্য অনুযায়ী অগুরো রাখা যেতে পারে। ৩। পুষ্প বাড়ীতে থাকলে তা অথবা সামান্য কয়েকটি ফুল (শ্বেত ও সুগন্ধযুক্ত
হলে ভাল) সত্যনারায়ণ রূপে শ্রীগুরুর শ্রীচরণে নিবেদন করা যায়।
৫। দীপ হিসেবে তৈল/ঘি, সলতে সহযোগে প্রদীপ অথবা সাধারণ ভাবে মোমবাতি ব্যবহার করা যেতে পারে।
৬। বাড়ীতে শ্রীশ্রীঠাকুরের আসন থাকলে তাঁর সম্মুখেই সির্ণি, সামান্য ফল ও মিষ্টি নৈবদ্য হিসেবে প্রদান করা যেতে পারে। তবে সত্যনারায়ণ পূজার জন্য সির্ণি বাধ্যতামূলক এবং নৈবদ্য তুলসীপত্র সহযোগে সত্যনারায়ণের উদ্দ্যেশে নিবেদন করতে হয়। নিবেদন গ্রহণ করার জন্য দু'হাত জোড় করে কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করতে হয়।
৭। ভোগ নিবেদন, আরতি শেষে নিষ্ঠার সহিত সত্যনারায়ণের পাঁচালী পাঠ করতে হবে।
৮। পাঁচালী পাঠ শেষে পুষ্পাঞ্জলি দেয়া যেতে পারে।
৯। তারপর গুরু প্রণাম করবেন। শ্রীগুরুর চরণে দক্ষিণা প্রদান করবেন।
১০। গুরু প্রণাম শেষে অন্ততঃ খুব কম সময় হলেও তারকব্রহ্ম নাম করে হরি ধ্বনি দিয়ে পূজার সমাপ্তি করবেন।
জয়রাম জয়গোবিন্দ গুরুদেব সবার মঙ্গল করো।
পূজা আপনিই করতে পারেন;
ঠাকুরকে জিজ্ঞাসা করিলাম, “সবই তো ঠিক হয়েছে, পূজা করবে কে?” ঠাকুর বলিলেন, “কেন? আপনি কি পূজা করিতে পারিবেন না?” আমি বলিলাম, “আমি তো ব্রাহ্মণ নই, আমার পূজায় ব্রাহ্মণগণ আপত্তি করিবেন হয়ত তাহারা আমার উৎসর্গীকৃত ভোগের প্রসাদ গ্রহণ করিবেন না। তাছাড়া আমি তো পূজার কোন মন্ত্রতন্ত্র বিধিবিধান কিছুই জানিনা।” ঠাকুর বলিলেন, “আজ প্রসাদ লইতে কেহ যদি আপত্তি করে, জানিবেন তাহার ভাগ্যে প্রসাদ নাই।” একটু হাসিয়া আবার বলিলেন, “আপনার মন্ত্র জানিবার কোন প্রয়োজন নাই, যেই ভাবে ভোগ দেন, সেই ভাবেই দিবেন। ওর চেয়ে ভাল মন্ত্র আর নেই।”- শ্রীরোহিণী কুমার মজুমদার এর “শ্রীগুরু শ্রীশ্রীরামঠাকুর” গ্রন্থ থেকে সংগৃহীত।
“ঠাকুরের মতে নরনারী উভয়েরই পূজায় সমান অধিকার আছে। যদি কোন ব্যক্তি শুচিদেহে একাগ্রচিত্তে ও একনিষ্ঠ ভক্তি সহকারে দেবতার অর্চনা করেন, দেবতা অবশ্যই পূজা গ্রহণ করেন। ইহাতে স্ত্রী পুরুষের বিচার নাই। “সমোহহং সর্বভূতেষু”- এটিও সেই গীতার নারায়ণের প্রতিশ্রুতি বাক্যের সাক্ষাৎ নজির- শ্রীমহেন্দ্র চন্দ্র চক্রবর্ত্তী এর “শ্রীশ্রীরামঠাকুরের জীবনকথা" গ্রন্থ থেকে সংগৃহীত।
পূজার সময়
প্রদোষে সত্যনারায়ণ পূজার প্রশস্ত সময়। সূর্য্য অস্ত যাওয়ার সময়কে অনেকে প্রদোষ বলে থাকেন। মূলতঃ প্রদোষ হল রাত্রের প্রথম প্রহর, ৩ঘন্টায় সম্পূর্ণ হয়। তা হলে ৬টায় সন্ধ্যা হলে ৯টা পর্যন্ত প্রদোষ কুঞ্জলাল মজুমদারের বাড়ীতে সত্যনারায়ণের আবির্ভাব সময়ে ১মাস ব্যাপী সায়ংসন্ধ্যা অতীত হলে পাঁচালী পাঠ করে পূজা করা হতো।
পেজ টি পরার জন্য সবার প্রতি রইলো অসংখ প্রণাম ও ধন্যবাদ।
শ্রীশ্রী সত্যনারায়ণ পূজার পূর্ব প্রস্তুতি এবং পূজা প্রণালীঃ /এবংশ্রীশ্রী সাত্যনারায়ান পাঁচালী
Reviewed by srisriramthakurfbpage
on
June 03, 2023
Rating:
No comments: