সেই অনুযায়ী পাঁচখানা টিকিট কিনে নেওয়া হয়েছিল । অথচ গেট পার হলাম আট জন । বাকী তিনজনের টিকিট কখন কেনা হল ? : - - শ্রীশ্রী রামঠাকুর ।
সেই অনুযায়ী পাঁচখানা টিকিট কিনে নেওয়া হয়েছিল ।
অথচ গেট পার হলাম আট জন ।
বাকী তিনজনের টিকিট কখন কেনা হল ?
: - - শ্রীশ্রী রামঠাকুর ।
ঘটনাটি সংক্ষেপে ।
পুরিগামী প্রথম ট্রেনটির কামরায় গিয়ে বসলেন ঠাকুর মহাশয় , শ্যামাচরণ চট্টোপাধ্যায় , বামাচরণ দে , সুধীর সরখেল ও প্রভাত চক্রবর্ত্তী মহাশয় ।
ষ্টেশনে ঠাকুর মহাশয়ের আশ্রিতদের একটু ভিড় জমে ছিল ।
ট্রেনটি আস্তে আস্তে চলতে আরম্ভ করল ।
বামাচরণ বাবু তিন জনকে চলন্ত ট্রেনে হাত বাড়িয়ে
তুললেন কামরায় ।
জানালা দিয়ে চেঁচিয়ে বললেন , ওরা তাদের সঙ্গে যাচ্ছেন , ফিরবেনও তাদের সঙ্গেই , সংবাদটা যেন তাদের
বাড়ীতে পৌঁছায় ।
ঠাকুর মহাশয়কে নিয়ে তারা আট জন নেমে পড়লেন
পুরী ষ্টেশনে ।
গত রাত্রিতে বামাচরণ বাবু একটা ট্যাক্সি ভাড়া করে রেখেছিলেন আজ সকালের জন্য ।
ষ্টেশন ছাড়ার পরে বামাচরণ বাবু প্রয়াস করেছিলেন
ঠাকুর মহাশয়কে ট্যাক্সিতে তুলতে ।
কিন্তু পথে নেমেই ঠাকুর মহাশয় অতি দ্রুত চলতে লাগলেন ।
সকলেই তাঁর অনুগমন করছেন , কিন্তু অত চেষ্টা করেও তারা কেউ ঠাকুর মহাশয়ের কাছাকাছি হতে পারছেন না ।
ঠাকুর মহাশয়কে দীর্ঘদিন ধরে যারা দেখেছেন ,
তাদের কাছে এটা অজানা নয় ।
বালিষ্ট তরুণ তাঁর কাছে হাঁটতে হার মেনেছে বারবার ।
এপথ সেপথ ঘোরাঘোরির পর ঠাকুর মহাশয়কে দেখা গেলে নির্দিষ্ট বাস বাটিতে প্রবেশ করতে ।
পেছন পেছন সকলে সেই বাড়িতে ঢুকলো ।
ঠাকুর মহাশয় নির্দিষ্ট ঘরে প্রবেশ করে ভিতরের খিল বন্ধ
করে দিয়েছেন ।
সুতরাং সেই বন্ধ দরজায় সকলে মিলে আকুল হয়ে যতবারই ঠাকুর মহাশয়কে ডাকুন না কেন সেই বন্ধ দরজা খুলল না ।
আর শুনাও গেল না মধুক্ষরা সেই কণ্ঠের সাদর আহ্বান, আসেন , আসেন ।
সকলে মিলে ঠাকুর ঘরের জানালার কাছে দাঁড়াবার জন্য প্রস্তুত হইলেন কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখেন ঐ ঘরের জানালা কয়টি ভিতর থেকে বন্ধ ।
নিরুপায় হয়ে সকলে ঠাকুর মহাশয়ের পাশের ঘরের মেঝেতে গিয়ে বসে পড়লেন ।
একটা বড় রকমের ত্রুটি নিশ্চিত ঘটেছে ।
সেইজন্য তো ঠাকুর মহাশয় এত ক্ষুব্ধ , এত বিরক্ত ।
কিন্তু কারণটা কি ?
কেউই খুঁজে পাচ্ছেন না ।
দীর্ঘদিন সঙ্গ লাভ করেছেন ,
পেয়েছেন পিতার স্নেহ ভালবাসা ।
কিন্তু আজ কোন্ অপরাধে এমন দুর্দিন নেমে এল তার হদিস পাচ্ছেন না কেহই ।
ঘন্টা খানেক এই নিয়ে তারা আলোচনায় মগ্ন ছিলেন ।
ঠাকুর মহাশয়ের শয়ন ঘরের দরজা খোলার একটু শব্দ হইল ।
উৎকর্ণ হয়ে সাত জনেই ছিলেন ।
ঠাকুর মহাশয় দ্রুত চরণে তাদের অতিক্রম করে রাস্তায়
গিয়ে নামলেন ।
পিছন পিছন তারা যে আসছিলেন জানতে পেরেই ঠাকুর মহাশয় বললেন ,
না- না , আমার সঙ্গে কেউই না ।
রৌদ্রঢালা পথে ঠাকুর মহাশয় একাকী চলে গেলেন ।
ক্ষুন্ন মনে ফিরে এসে সকলেই এসে বসলেন যে জার জায়গায় ।
পুনরায় একই প্রশ্ন , তাদের কোথায় ভূল , কোথায় ত্রুটি ?
বেলা দুটোর সময় ঠাকুর মহাশয় ফিরে এলেন ।
এবার ঠাকুর মহাশয়ের মুখে চোখে বেদনা বা
বিরক্তির চিহ্ন নাই ।
নিজেই বসে পড়লেন তাদের সামনে ।
স্নেহ সুধা ভরা কণ্ঠে বললেন ,
সকাল থেইক্যা একটু চা পর্য্যন্তও তো খান নাই আপনেরা ।
প্রভাত চক্রবর্ত্তী মহাশয় বললেন ,
খুনী আসামীও বিচারালয়ে তার পক্ষে কথা বলার সুযোগ পায় ,
আর আমরা কি অন্যায় করলাম তাও জানতে পারলাম না ।
আমরা অপরাধ প্রতি মুহূর্তেই করে থাকি ,
সেটা আপনি ভাল জানেন ।
এবার করজোড়ে প্রভাত চক্রবর্ত্তী ঠাকুর মহাশয়ের কাছে জানতে চাইলেন , তাদের অপরাধটা কি ?
যদি দয়া করিয়া বলেন ।
গতিক দেখে একজন উঠে গেলেন কলতলায় ।
তিনি বুঝেছিলেন ,
এই বেলায় অন্ন ঠাকুর মহাশয় আর তাদের জন্য মাপেন নাই ।
অন্ততপক্ষে স্নানটা তো সমাপন করে রাখা উচিৎ ।
তাই তিনি জল ঢালছিলেন নিজের মাথায় ।
ঠাকুর মহাশয়ের কাছে অপরাধের কথা শুনেই অন্য একজন ছুটে গিয়েছেন কলতলায় ।
সেখান থেকে স্নানরত ভদ্রলোককে নিয়ে এলেন ।
ভদ্রলোকটি কোনরূপে কাপড়ের জল নিংড়ে সিক্ত দেহে এসে লুটিয়ে পড়লেন শ্রী ঠাকুরের চরণে ।
ঠাকুর মহাশয় বললেন ,
পূর্বে তো স্থির ছিল তারা পাঁচজন পুরীতে আসবেন এবং সেই অনুযায়ী পাঁচখানা টিকিট কিনে নেওয়া হয়েছিল ।
অথচ গেট পার হলাম আটজন ।
বাকী তিনজনের টিকিট কখন কেনা হল ?
কখন জমা দিলেন জরিমানা ?
মুক্ত কণ্ঠে স্বীকার করলেন যে চেকার সকলেই চেনাশোনা ।
এই অপকর্ম শুধু আজই করিনি , পূর্বে বহুবার করেছি । উপস্থিতি কারোও আর বুঝতে বিলম্ব হল না ।
কারণ হল রেল কোম্পানিকে বঞ্চনা করা ।
ভদ্রলোকটি একটা সাইকেল ভাড়া করে চলে গেলেন
পুরী ষ্টেশনে রেল কোম্পানির প্রাপ্য মাশুল জমা দিতে ।
ঘন্টাখানেক পরে রসিদ নিয়ে ফিরে এলেন ঐ ভদ্রলোক , রাখলেন ঠাকুর মহাশয়ের চরণে ।
প্রণাম করে বললেন ,
আপনেরা সকলেই দেখে নিন যে টাকা ঠিক ঠিক
জমা পড়েছে কিনা ।
তারপর ঠাকুর মহাশয় বলে দিলেন ,
জগন্নাথ মন্দিরের কাছে এক দোকানে ভালো মালাই তৈরী হয় , সেখান থেকে মালাই আর ছানার মুড়কি আনবেন ।
মালাই , মুড়কি এলো ।
হাত ধুইয়ে একজন খানিকটা মালাই আর মুড়কি ঠাকুর মহাশয়ের সামনে রাখলেন ।
বাকীটা সকলে সমভাবে বন্টন করে খেলেন ।
জয় রাম ।
সেই অনুযায়ী পাঁচখানা টিকিট কিনে নেওয়া হয়েছিল । অথচ গেট পার হলাম আট জন । বাকী তিনজনের টিকিট কখন কেনা হল ? : - - শ্রীশ্রী রামঠাকুর ।
Reviewed by srisriramthakurfbpage
on
March 25, 2024
Rating:
No comments: