ঠাকুরকে সবাই ধরলেন----- মৃত্যুর পরে মনমোহনের অবস্থান কোথায়, কি অবস্থায় তিনি আছেন? ঠাকুর বললেন ------ তিনি মুক্ত হয়ে গেছেন। তাঁর জন্ম আর হবে না।

বেদবানী শ্রীশ্রী রামঠাকুর এর বাণী 
ঠাকুরের কথা--- আত্মজ্ঞানপ্রদানেন🌹
একদিন ঠাকুরকে জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা ঠাকুর আপনি তো সর্বদাই 'নাম' করতে বলেন। কিন্তু একমনে তো 'নাম' করতে পারি না। নাম করতে বসলেই নানারূপ চিন্তা এসে মনকে বিচলিত করে তোলে। এই চঞ্চল মনকে স্থির করবার উপায় কি?
"মনের অধীন না হইয়া, সর্বদাই প্রাণের সঙ্গ করিবেন। যখন ঘুমাইয়া থাকেন, তখন তো মন থাকে না। প্রাণই থাকে। প্রাণেই তো নাম করে। প্রাণ বায়ুর সঙ্গে নাম নিয়া অভ্যাস করিতে করিতে চৈতন্য শক্তির উদয় হয়। ব্রজভূমে বাস হয়। তখনই মনের চঞ্চল্য হইতে অব্যাহতি পাওয়া যায়।" ---- প্রত্যুত্তরে ঠাকুর বললেন।
এমনকি সহজ উপায় আছে, যা অভ্যাস করলে গুরু কে সব সময় অনুভব করা যায়? প্রশ্ন রাখলাম।----" নাম।" নাম করিলেই গুরুকে পাওয়া যায়। নামের মাধ্যমে তাঁহার সহিত যোগাযোগের কেন্দ্র স্থাপিত হয়। সেই কেন্দ্র স্থাপন করিলেই " তত্বমসি", তুমিই সেই পরমব্রহ্ম, যাহা প্রত্যেকের অন্তরে নিহিত আছেন, তাহা উপলব্ধি করা যায়। এবং তাঁর কৃপালাভ হয়।''----ঠাকুর বললেন। ঠাকুর আরও বললেন, ----'নাম করিতে করিতে ধাম খোলে। নাম
আর ভগবান এক।'
জয় শ্রীশ্রীদয়ানিধি রাম
"কৃপাসিন্ধু রামঠাকুর "---মনোরঞ্জন মুখোপাধ্যায়

শ্রীশ্রী রামঠাকুর এর দুর্লভ চিত্রপট 


" পুত্রের স্বধর্ম্ম ""
সংসারে পিতামাতাকে পালন করা পুত্রের স্বধর্ম্ম। যে কোন রকমে যে যে প্রাক্তনের ভোগের সাহায্যে করা যায় তাহাই পুত্রের কর্ম্ম, কর্ত্তব্য। আপন সুখের জন্য নয়।
(২/৬৫)


উচ্চ নীচের ভেদ নেই তাঁর কাছে। নেই ধনী,নির্ধনের তারতম্য। ধার্মিক অধার্মিকের বিচার বাইরে দেখে নয়। তিনি বিচরণ করেন সবার অন্তরে অন্তরে। তাই অন্তর দেখেই অন্তরতম সবার অবজ্ঞাত, জনকেও বুকে টেনে নেন প্রিয়জন জ্ঞানে।

ঠাকুর তখন বাস করছেন বিক্রমপুরে। সেখান থেকে এলেন ঢাকায়। এখানে রাজবাড়ির অন্তর্গত বেরপাড়া গ্রামের সুধীর সরখেলের বাড়িতে ঠাকুর থাকছেন। বেরপাড়া থেকে বাহেরক গ্রাম প্রায় অর্ধমাইল দূরে। সেখানে ছিল সত্যরঞ্জন ও জ্ঞানচন্দ্র গাঙ্গুলীর বাড়ি। সত্যরঞ্জনের কাকার নাম ছিল মনমোহন গাঙ্গুলী। অতীব দুশ্চরিত্র। গ্রামবাসীর চোখে ঘৃণিত। সবাই মিলে করেছে সমাজচ্যুত। কিন্তু এ ঘৃণার কারণ কি?
তিনি ভালবেসেছিলেন এক বারবনিতাকে। থাকতেনও তাকে নিয়েই। থাকতেন তাঁর কর্ম্মস্থল ঢাকা শহরে। পতিতার প্রেমে মুগ্ধ মনমোহন আত্মীয়স্বজন একরকম পরিত্যাগ করেছিলেন। ছিল না দেশ-গাঁর সঙ্গে কোন যোগাযোগ।
যৌবনের তরঙ্গায়িত নদীটায় দেখা দিল যখন ভাটার টান, দেখা দিল প্রৌঢ়ত্ব, তখন পড়লেন তিনি অসুস্থ হয়ে।সহায়হীন, সম্বলহীন মনমোহন তখন তাঁর মনের জগতে বড় একা। বড় অসহায়।
এ অবস্থায় বারবনিতাও আর বেশিদিন রাখল না তাঁকে কাছে। একদিন গোপনে এই রোগজর্জর জীর্ণ ক্লান্ত মানুষটিকে রেখে গেল তাঁদের বাড়ির সন্নিকটস্থ একটি বৈষ্ণব আখড়ার জঙ্গলের মধ্যে। নিশ্চয়ই কেউ দয়াদ্র হয়ে ওঁকে আশ্রয় দেবে--- এই ছিল মেয়েটির আশা ও অনুমান।
এ অঞ্চল মনমোহন বেশ পরিচিত লোক। বৈষ্ণবদের চোখে পড়তেই তারা চিনতে পারল মনমোহনকে। নিয়ে এল আখড়ায় আশ্রয় দিল একটি ঘরে। ক্রমে গ্রামবাসীরা এ সংবাদ জানতে পারল। তা বলে এল না বিন্দু সহানুভূতি। বরং তারা বিজ্ঞের মতবলল ----'যেমনি কর্ম তেমনি ফল। ওর মুখ দর্শন করলেও পাপ হয়'। ভ্রাতুষ্পুত্র সত্যরঞ্জনও গ্রামবাসীর মত অটল। তিনি কাকা বলে তাঁকে ক্ষমার চোখে দেখতে প্রস্তুত নন। কিন্তু রামসাধুর কাছে এসংবাদ অবিদিত রইল না। এ অঞ্চলে ঠাকুর তখন যথেষ্ট প্রখ্যাত ও শ্রদ্ধার আসনে প্রতিষ্ঠিত। তাঁর অন্তর কেঁদে উঠল এই অসহায় মানুষটির জন্য। তিনি সত্যরঞ্জনকে নানাভাবে বোঝালেন। দিলেন উপদেশ। অবশেষে তাঁকে নিয়েই ঠাকুর চলে এলেন আখড়ায় তাঁর কাকার কাছে।
অনুযোগের তো অন্ত নেই। ঘৃণারও শেষ নেই। তবুও কাকাকে নিয়ে এলেন সত্যরঞ্জন তাঁর বাড়িতে।দিলেন ছোট একখানা ঘর। মৃত্যুশয্যায় শায়িত মনমোহনের রক্তামাশয়। বাঁচার কোনো আশা নেই। ঠাকুর দিবারাত্র তাঁর শিয়রে জাগ্রত। তিনিই করেন তাঁর সেবা ও পরিচর্যা। এমনি করে কেটে গেল তিনটি মাস। মনমোহন একদিন চোখ বুজলেন। পরম শান্তির ক্রোড়ে পেলেন আশ্রয়। কিন্তু দেখা দিল অন্যরকম বিপদ।গ্রামের কেউ এ দেহ সৎকার করতে সম্মত নয়। তারা স্পর্শ করবেও না মনমোহন কে। এখন উপায়? স্বয়ং নারায়ণ যার সহায়, তাঁর দেহের জন্য আবার ভাবনা'?
ঠাকুর নিজে এলেন এগিয়ে। সঙ্গে নিলেন শুধু সত্যরঞ্জনকে। দুজনে মিলে কাটলেন আমগাছ। শবদেহ কাঁধে বয়ে নিয়ে গেলেন শ্মশানে দাহ করলেন দুজনেই।নির্বিঘ্নে হয়ে গেল মনমোহনের অন্তেষ্ট্যি ক্রিয়া। জীবশিক্ষার এক অপূর্ব নিদর্শন রাখলেন ঠাকুর। আঘাত করলেন কুসংস্কারাছন্ন সমাজের বুকে নীরবে, অলক্ষ্যে।
বাইরে ভ্রষ্টাচারী কিন্তু অন্তরজগতে মনমোহন ছিলেন মুক্তাত্মা। তা না হলে ঠাকুর কেন এগিয়ে যাবেন? প্রাক্তনের ভোগ-ঋণ পরিশোধ করার জন্যই এবারে তার পরিগ্রহ। তিনি কাকে কোন পথে কোন কাজে নিযুক্ত করবেন, তা তো শুধু তিনিই জানেন। দ্রষ্টাই তা দেখতে পান। বুঝতে পারেন। কিন্তু সাধনহীন জীবন সম্পূর্ণই অজ্ঞ। অন্ধ তারা কি করে বুঝতে পারবে তারা আর একটা জীবনের রহস্য। আমাদের বিচার - আচার বাইর নিয়ে। সংস্কার আর সন্দেহের অন্ধ অহংকারে আমরা 'আমি'কে নিয়ে দিন-রাত বারে বারে বিধ্বস্ত হচ্ছি। কিন্তু তবুও পরম জনের চরম আদালতের রায় শুনছি না। আমি যে ফুলবাগানের মালী বৈ কেউ নয়, এ বোধে প্রতিষ্ঠিত হয় না আমাদের বিকারগ্রস্ত মন। মনের দাসত্ব করেই বেলা শেষ হয়ে আসে। প্রাণের সন্ধানে একবারও আত্মস্থ হয়ে বসবার ইচ্ছাটি জাগে না।
ঠাকুরকে সবাই ধরলেন----- মৃত্যুর পরে মনমোহনের অবস্থান কোথায়, কি অবস্থায় তিনি আছেন?
ঠাকুর বললেন ------ তিনি মুক্ত হয়ে গেছেন। তাঁর জন্ম আর হবে না।
জয় রাম। জয় গোবিন্দ।।
প্রচারে কৈবল্যধাম।।


ঠাকুরকে সবাই ধরলেন----- মৃত্যুর পরে মনমোহনের অবস্থান কোথায়, কি অবস্থায় তিনি আছেন? ঠাকুর বললেন ------ তিনি মুক্ত হয়ে গেছেন। তাঁর জন্ম আর হবে না। ঠাকুরকে সবাই ধরলেন----- মৃত্যুর পরে মনমোহনের অবস্থান কোথায়, কি অবস্থায় তিনি আছেন?     ঠাকুর বললেন ------ তিনি মুক্ত হয়ে গেছেন। তাঁর জন্ম আর হবে না। Reviewed by srisriramthakurfbpage on May 15, 2024 Rating: 5

No comments:

শ্রী শ্রী রামঠাকুরেরস্বহস্ত লিখিত পত্রাংশ -দ্বিতীয় খন্ড-223

Powered by Blogger.